শিশুবিকাশের ধারা
শিশু বেড়ে ওঠে, শিশুর মন ফোটে। দেহ সৌষ্ঠবে বাড়ে। বিকশিত হয় তার মনোজগৎ। কুঁড়ি থেকে ধীরে ধীরে পাপড়ি সাজানো রং উজ্জ্বল ফোটা পুষ্পের সঙ্গে তুলনা চলে শিশুর মনোজগতের। তার জ্ঞানের পরিধি ধীরে ধীরে বাড়ে। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে সে, মানুষের সঙ্গে কথা বলা, মেলামেশা ও অন্যান্য বিষয়ে দক্ষতা অর্জিত হয় ধাপে ধাপে। তার চিন্তাচেতনায় আসে অগ্রগতি-এ হলো শিশুর বিকাশ।
প্রথম পর্যায়
– জন্মের পর সে পর্যায়ক্রমে উপুড় হয়।
– হামাগুড়ি দেয় — বসে — দাঁড়ায় — হাঁটে ও দৌড়ায়।
দ্বিতীয় পর্যায়
– প্রথম দিকে শিশু শুধু মা-বাবাকে চিনতে শেখে — তারপর ধীরে ধীরে পরিবারের অন্যদের চেনে, জানে — সবার সঙ্গে মেশে।
তৃতীয় পর্যায়
– শুরুতে কান্নাই হলো শিশুর ভাষা।
– আস্তে আস্তে সে বাবা, দাদা, মামা-এ ধরনের ছোট ছোট শব্দ বলে।
– কিছুদিন পর সে দুই শব্দ বলে, তারপর একটু বড় বাক্য বলতে শেখে। এভাবে সে একসময় গুছিয়ে কথা বলতে শিখে যায়।
শিশু একটি ধাপ অতিক্রম না করে অন্য ধাপে যেতে পারে না। যেমন হামাগুড়ি না দিয়ে আগে হাঁটতে সক্ষম হয় না।
শিশুর সহায়ক পরিবেশ
পরিবারে মা, বাবা, ভাই, বোন, আত্মীয়স্বজনকে ঘিরে হাসিখুশি পারিবারিক পরিবেশ, পাশাপাশি নির্মল প্রাকৃতিক ও সুন্দর সামাজিক পরিবেশ। একজন শিশুকে যদি সহায়ক পরিবেশে শারীরিক ও মানসিক যত্নে বড় হয়ে উঠতে সাহায্য করা হয়, তবে সে পরিপূর্ণ বিকশিত হয়ে সফল পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে।
শিশুর জন্য ক্ষতিকারক
– তুচ্ছতাচ্ছিল্য ভাব।
– শিশুদের গুরুত্ব না দেওয়ার ভাব প্রকাশ করা।
– অবহেলা করা।
– তাদের সামনে ঝগড়া-বিবাদ করা।
– সব সময় ধমক দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করা।
– মারধর করা।
– খেলার জন্য সময় ও সুযোগ না দেওয়া।
– যে বয়সে যা করার কথা নয় সে বয়সে তা করানোর চেষ্টা করা (যেমন হাঁটার বয়স না হলেও হাঁটাতে শেখানো)।
– মানসিক চাপে রাখা (যেমন অল্পবয়স থেকেই অতিরিক্ত পাঠ্যাভ্যাসে বাধ্য করা)।
– ভয় দেখানো।
– মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া।
– গালমন্দ করা।
– শিশুর খারাপ দিকগুলো অন্যের সামনে তুলে ধরা।
আমরা যারা বড়, তাদেরই দায়িত্ব শিশুদের ভালোবেসে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পরিপূর্ণভাবে গড়ে তোলার পরিবেশ সৃষ্টি করা ও তা বজায় রাখা।
প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ০১, ২০০৯