কল-কারখানা আইন, ১৯৬৫
(The Factories Act. 1965)
[১৯৬৫ সালে ৪নং আইন]
[১৯৩৪ সালের কারখানা আইন (১৯৩৪ সালের ২৫নং আইন) বাতিল করে কিছু সংশোধনীসহ আবারো প্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রণীত আইন]
প্রথম অধ্যায়
প্রাথমিক বিষয়াদি
ধারা-১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, আওতা ও আরম্ভ :
এই আইন কল-কারখানা আইন, ১৯৬৫, নামে অভিহিত হইবে।
সমগ্র বাংলাদেশ এই আইনের আওতাভুক্ত।
ইহা অবিলম্বে বলবত হইবে।
ধারা-২। সংজ্ঞাসমূহ :
বিষয়বস্তু বা প্রসঙ্গের সহিত সঙ্গতিহীন না হইলে এই আইনে-
(ক) ‘কিশোর-কিশোরী’ বলিতে এমন ব্যক্তিকে বুঝাইবে, যাহার বয়স ষোল বত্সর পূর্ণ হইয়াছে, কিন্তু আঠারো বত্সর হয় নাই।
(খ) ‘সাবালক’ বলিতে এমন ব্যক্তিকে বুঝাইবে, যাহার বয়স আঠারো বত্সর পূর্ণ হইয়াছে।
(গ) ‘শিশু’ বলিতে এমন ব্যক্তিকে বুঝাইবে, যাহার বয়স ষোল বত্সর পূর্ণ হয় নাই।
(ঘ) ‘দিন’ বলিতে মধ্যরাত্রি হইতে শুরু করিয়া চব্বিশ ঘন্টা সময় বুঝাইবে।
(ঙ) ‘বিষ্ফোরক দ্রব্য’ বলিতে বিষ্ফোরক দ্রব্য প্রস্তুত করার উপাদানও বুঝাইবে।
(চ) ‘কল-কারখানা’ বলিতে সীমানাসহ এমন একটি ভবন বুঝাইবে, যেখানে দশ বা ততোধিক শ্রমিক কাজ করিতেছে বা পূর্ববর্তী বারো মাসের মধ্যে কোনো দিন কাজ করিতেছিল এবং যেখানে বৈদ্যুতিক শক্তির সাহায্যে বা তাহা ব্যতীত কোনো উত্পাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হইতেছে; কিন্তু ইহা দ্বারা ১৯২৩ সালের খনি আইনের (১৯২৩ সালের ৪নং আইন) আওতাধীন কোনো খনি বুঝাইবে না।
কোনো ভবন একটি কারখানা হইতে হইলে সেখানে অবিরামভাবে শ্রমিকগণ কাজ করিতে থাকিবে, এইরূপ হওয়ার প্রয়োজন নাই। কেবলমাত্র যদি পূর্ববর্তী বারো মাসের মধ্যে কোনো একদিন সেখানে দশজন শ্রমিক কার্যে র্র্নিযুক্ত হইয়া থাকে, তাহাই যথেষ্ট, তত্পর যদি শ্রমিকদের সংখ্যা হ্রাসপ্রাপ্তও হইয়া থাকে, তথাপি ঐদিন হইতে পরবর্তী বারো মাস পর্যন্ত সেই ভবনটি কারখানা বলিয়া গণ্য হইবে।
(ছ) ‘যন্ত্রপাতি’ বলিতে প্রধান চালিকা যন্ত্র, সঞ্চালনকারী যন্ত্র এবং বিদ্যুত্ উত্পাদন, রূপান্তর, সঞ্চালন ও প্রয়োগের জন্য ব্যবহৃত অন্যান্য কলকব্জাকেও বোঝায়।
(জ) ‘উত্পাদন প্রক্রিয়া’ বলিতে বোঝায়-
(১) কোনো বস্তু ব্যবহার, বিক্রয়, পরিবহন, অর্পন, প্রদর্শন বা বিহিত ব্যবস্থা করার জন্য উহার প্রস্তুত, রূপান্তর, মেরামত, অঙ্গ-সজ্জা করা, উহাতে রং করা, ধৌত করা, শেষ স্পর্শ দেওয়া বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহারোপযোগী করার প্রক্রিয়া, অথবা
(২) তৈল, গ্যাস, পানি, নর্দমার ময়লা বা অন্য কোনো তরল পদার্থ বা ময়লা পাম্প করার প্রক্রিয়া; অথবা
(৩) বিদ্যুত্ কিংবা গ্যাস উত্পাদন, রূপান্তর বা সঞ্চালন করিবার প্রক্রিয়া, অথবা
(৪) জাহাজ বা নৌযান নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ, মেরামত, সংস্কার, নির্মাণ কার্যের শেষ স্পর্শ দান বা ভাঙ্গিয়া ফেলার প্রক্রিয়া; অথবা
(৫) মুদ্রণ যন্ত্র, লিথোগ্রাফি, ফটোগ্রাফার দ্বারা বা অনুরূপ কোনো উপায়ে কিছু ছাপাইবার অথবা স্বতন্ত্র ব্যবসা হিসাবে বা মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে বা অন্য কোনো ব্যবসার আনুষাঙ্গিক কার্য হিসাবে পুস্তক বাঁধাই করার প্রক্রিয়া।
(ঝ) কারখানা প্রসঙ্গে দখলকারী বলিতে এমন ব্যক্তিকে বোঝায়, কারখানার কাজ-কর্মের উপর যাহার চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ আছে।
তবে শর্ত এই যে, যেই ক্ষেত্রে কারখানা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ম্যানেজিং এজেন্টের উপর ন্যস্ত থাকে, সেই ক্ষেত্রে ম্যানেজিং এজেন্ট সেই কারখানার দখলকারী বলিয়া গণ্য হইবে।
(ঞ) ‘নির্ধারিত’ বলিতে এই আইন অনুসারে সরকার কর্তৃক প্রণীত বিধিমালা দ্বারা নির্ধারিত বুঝাইবে।
(ট) ‘প্রধান চালিকা যন্ত্র’ বলিতে কোনো ইঞ্জিন, মোটর অথবা বিদ্যুত্ উত্পাদন বা সরবরাহকারী অন্য কোনো কলকব্জা বুঝাইবে।
(ঠ) ‘রীলে’ বলিতে যে ক্ষেত্রে একই ধরনের কাজ দিনের বিভিন্ন সময় দুই বা ততোধিক দলবদ্ধ শ্রমিক কর্তৃক সম্পন্ন হয়, তাহার প্রত্যেক সময় বুঝাইবে।
(ড) ‘শিফ্ট’ বলিতে যে ক্ষেত্রে একই ধরনের কাজ দিনের বিভিন্ন সময় দুই বা ততোধিক দলবদ্ধ শ্রমিক কর্তৃক সম্পন্ন হয়, তাহার প্রত্যেক সময় বুঝাইবে।
(ঢ) ‘সঞ্চালন যন্ত্র’ বলিতে কোনো শ্যাফ্ট হুইল, ড্রাম-পুলী, পুলী-ব্যবস্থা, কাপলিং ক্লাচ, ড্রাইভিং বেল্ট বা অন্য যেই কলকব্জার সাহায্যে প্রধান চালিকার গতি অন্য কোনো যন্ত্রে সঞ্চারিত বা গৃহীত হয়, তাহা বুঝাইবে।
(ণ) ‘সপ্তাহ’ বলিতে নির্দিষ্ট সাপ্তাহিক ছুটির দিনের পূর্ববর্তী মধ্যরাত্রি হইতে আরম্ভ করিয়া সাত দিন সময় বুঝাইবে।
(ত) ‘শ্রমিক’ বলিতে এমন ব্যক্তিকে বুঝাইবে, যেই ব্যক্তি বেতনসহ বা বিনা বেতনে কোনো উত্পাদন প্রক্রিয়ার কাজে, অথবা উত্পাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহার্য যন্ত্রপাতি বা ভবন পরিষ্কার কাজে, অথবা উত্পাদন প্রক্রিয়ার সহিত সংশ্লিষ্ট বা উত্পাদন প্রক্রিয়ার আনুষঙ্গিক কাজে সরাসরিভাবে বা এজেন্সীর মাধ্যমে নিযুক্ত হয়; কিন্তু যেই কক্ষে বা স্থানে কোনো উত্পাদন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় না, সেখানে সম্পূর্ণরূপে কেরাণীর পদে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে বুঝাইবে না।
(থ) ‘তরুণ ব্যক্তি’ বলিতে এমন ব্যক্তিকে বুঝাইবে, যেই ব্যক্তি একজন শিশু বা নব যুবক বা যুবতী।
(দ) ‘শক্তি’ বলিতে এইরূপ বৈদ্যুতিক শক্তি বা অন্যবিধ শক্তি বুঝাইবে, যাহা যান্ত্রিক উপায়ে সঞ্চালিত হয় এবং যাহা মানবিক বা পাশবিক শ্রমের দ্বারা উত্পন্ন হয় নাই।
(ধ) ‘মজুরী’ বলিতে ১ঌ৩৬ সালের মজুরী পরিশোধ আইনে (১ঌ৩৬ সালের ৪ নং আইন) বর্র্ণিত মজুরী বুঝাইবে।
ধারা-৩। কতিপয় স্থানে এই আইনের বিধানসমূহ প্রয়োগের ক্ষমতা :
(১) সরকারী গেজেটে বিজ্ঞপ্তি প্রচারের দ্বারা সরকার ঘোষণা করিতে পারেন যে, যেই স্থানে বিদ্যুত শক্তি ব্যবহার করিয়া বা তাহা না করিয়া উত্পাদন প্রক্রিয়া পরিচালিত হইতেছে বা সাধারণত হইয়া থাকে, এবং সেইখানে পাঁচজন বা ততোধিক শ্রমিক কাজ করিতেছে বা পূর্ববর্তী বারো মাসের মধ্যে কোনো দিন কাজ করিয়াছে, সেই স্থানে এই আইনের বিধানসমূহ প্রযোজ্য হইবে।
(২) উপধারা (১) অনুসারে কোনো বিজ্ঞপ্তি একটি স্থান সম্পর্কে বা অনুরূপ শ্রেণীর কোন স্থানসমূহ সম্পর্কে অথবা সাধারণভাবে অনুরূপ সকল স্থান সম্পর্কে প্রচার করা যাইতে পারে।
২ ধারার (চ) অনুচ্ছেদে যাহাই থাকুক না কেন, যেই স্থানে এই আইনের সকল বা কোনো কোনো বিধান (১) উপধারার ঘোষণা অনুসারে বর্তমানে প্রযোজ্য, সেই স্থান কেবল এই আইনের বিধান প্রয়োগ সাপেক্ষে কারখানা বলিয়া বিবেচিত হইবে, অন্যথায় নয়।
ধারা-৪। বিভিন্ন বিভাগকে স্বতন্ত্র কারখানা বলিয়া ঘোষণা করার ক্ষমতা :
সরকার লিখিত আদেশ দ্বারা নির্দেশ দিতে পারেন যে, নির্দিষ্ট কোনো কারখানার বিভিন্ন বিভাগ বা শাখাসমূহ এই আইনের সকল বা কোনো কোনো উদ্দেশ্যে এক কারখানা বলিয়া বিবেচিত হইবে।