স্কুলে মধ্যাহ্ন বিরতির সময় হেরফের করলে তা শিশুর স্বাস্থ্য ও আচরণের ওপর প্রভাব পড়ে। হতে পারে তা হিতকর—এমন দেখেছেন গবেষকেরা।
এমন একটি পর্যবেক্ষণ নিউজার্সির রবিনসডিল শ্যারন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের। দুপুরের আহারের আগে শিশুদের খেলতে দিলে তারা হয়ে ওঠে শান্তশিষ্ট। কিছু কিছু স্কুল মধ্যাহ্ন বিরতির সময় পুনর্নির্ধারণ করছে। মধ্যাহ্নের আহারের আগে ছেলেমেয়েদের খেলার ক্লাস দেওয়া হচ্ছে। ক্যাফেটেরিয়া ও শ্রেণীকক্ষে আসছে পরিবর্তন।
সেসব স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, মধ্যাহ্ন আহারের আগে শিশুরা খেলাধুলা করলে খাবারের অপচয় হয় কম এবং দুধ, ফল ও সবজি গ্রহণ বাড়ে। শিশুদের আচরণেও আসে ইতিবাচক পরিবর্তন।
শ্যারন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জ্যানেট সিনকেউইজ বলেন, ‘স্কুলের বিরতি আগে থাকলে শিক্ষার্থীরা হয় শান্তশিষ্ট। তারা মনে করে, আহারের জন্য থাকবে প্রচুর সময়, তাই এর জন্য ব্যস্ত হতে হবে না, ধীরেসুস্থে খাওয়া যাবে।’
এ ধরনের পরিবর্তন প্রথম করা হয়েছিল অ্যারিজোনার একটি স্কুলে। ১০ বছর আগে পরিবর্তনটির পরিকল্পনা করেছিলেন স্কুলের নার্স। স্কুলটি একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিল, স্কুলে খাদ্য অপচয়, ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ, শিশুর আচরণ—এসবও লক্ষ করা হলো। বছর শেষে দেখা গেল, ডাক্তারের কাছে যাওয়া কমেছে ৪০ শতাংশ, মাথাধরা অনেক কমেছে, পেট ব্যথাও কমেছে।
অন্যান্য স্কুলে শিশুরা তড়িঘড়ি মধ্যাহ্নের আহার করে খেলার মাঠে ছুটল, খাবার বেশির ভাগ রইল পড়ে। এ পরিবর্তনটি করাতে খাবারের অপচয় কমল। দিনের শেষে শিশুদের অসুস্থ হওয়া বা ক্ষুধার্ত হওয়া কমল।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক স্কুলে এখন দুপুরের খাবারের আগে খেলার বিরতি বেড়েছে। এতে ক্লাসে পারফরম্যান্সও ভালো হচ্ছে ছেলেমেয়েদের।
শিশুদের খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চা উন্নত করার উদ্যোগ থেকে এ পরিবর্তন। ২০০২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মনটানায় স্টেট স্কুলের কর্তৃপক্ষ এ জন্য দুপুরের খাবারের আগে বিরতি চালু করে। মনটানা টিম নিউট্রিশন কর্মসূচির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুপুরের আহারের আগে যে শিশুরা খেলাধুলা করল, তারা কম খাবার অপচয় করল, বেশি দুধ পান করল, বেশি পানি পান করল। আর অ্যারিজোনা স্কুলে শ্রেণীকক্ষে যখন ছেলেমেয়েরা ফিরল, তখন তারা ছিল অনেক শান্তশিষ্ট, লেখাপড়া করল বাড়তি আরও ১০ মিনিট।
এ কর্মসূচির একটি চ্যালেঞ্জ ছিল, শিশুদের ধীরে খাওয়ায় অভ্যস্ত করতে। অতীতে শিশুরা প্রায়ই দুপুরের খাবার শেষ করত পাঁচ মিনিটে, তড়িঘড়ি ছুটত বিরতি পাওয়ার জন্য। কর্মসূচি পরিবর্তন করাতে ক্যাফেটেরিয়ার কর্মচারীরা বাচ্চাদের ধীরে ধীরে খেতে উত্সাহিত করলেন, ভালো করে চিবিয়ে খেতে উত্সাহিত করলেন এবং মধ্যাহ্ন আহার শেষ করার জন্য পুরো সময়টা কাজে লাগাতে বললেন। সুপারিনটেনডেন্ট অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশনের ডেনিস জনিউ বলেন, ‘এসব পাইলট প্রকল্প থেকে দেখা যাচ্ছে, ছাত্রছাত্রীরা খাদ্য কম অপচয় করছে, খাওয়ার পরিবেশ অনেক শিথিল ও মনোরম, আচরণও ভালো হচ্ছে। কারণ, তারা তড়িঘড়ি দৌড়াচ্ছে না খেলায় বা ক্লাসে।’ আমাদের দেশেও এমন পরিবর্তনের কর্মসূচি করে দেখা যেতে পারে। স্কুলে মধ্যাহ্ন আহার দেওয়া হলে শিশুরাও ফাস্টফুড কম খাবে। শাকসবজি, গমের রুটি, ফল, দুধ, জল দিলে চমত্কার মধ্যাহ্ন আহার হবে। স্কুলের বাস থাকলে শহরের যানজট সকাল-দুপুরে অনেক কমে যাবে। কয়েকটি স্কুল মিলে যদি একটি খেলার মাঠ থাকে, তবে বাচ্চাদের শরীরচর্চায় উত্সাহিত করা যাবে। স্কুলের শিক্ষকেরা যা বলেন, এখন ছেলেমেয়েরা তা-ই শোনে। কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখতে পারে। শিক্ষকের ভূমিকা তাই সবচেয়ে বেশি।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
খেলাধুলার পর টিফিন খেলে ভালো পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১২, ২০১০