Author Topic: হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় উচ্চ রক্তচ  (Read 3240 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
হৃদরোগ ও স্ট্রোকের প্রধান কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ। বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের রোগী উচ্চ রক্তচাপের জন্য মৃত্যু বা পঙ্গুত্ব বরণ করেন। ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি শারীরিক সমস্যা ও ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি উপাদান নিয়ন্ত্রণে রাখলে হৃদরোগ ও স্ট্রোক থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।

বিভিন্ন গবেষণায় মূলত তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ উপাদানের স্বীকৃতি মিলেছে:
 ধূমপান ও তামাকের ব্যবহার।
 স্বাস্থ্যের অনুপযোগী খাদ্য-খাবার।
 শারীরিক পরিশ্রম না করা।

উল্লিখিত কারণে তিনটি শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়:
 উচ্চ রক্তচাপ।
 ডায়াবেটিস (রক্তে অধিক শর্করা)।
 রক্তে চর্বির আধিক্য।
এ তিনটি শারীরিক সমস্যার জন্য হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসকে আধুনিক বিশ্বের মহামারি বলা হয়। উন্নত দেশগুলোতে ধূমপানের পরিমাণ খানিকটা কমে এলেও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তামাকের বহুবিধ ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর্থিক সচ্ছলতার সঙ্গে সঙ্গে অনেক উন্নয়নশীল দেশের উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠীর শরীরের ওজন বৃদ্ধি ও বয়সকালীন ডায়াবেটিস (টাইপ-২) একরূপ মহামারি আকারে বিস্তার লাভ করছে।

উচ্চ রক্তচাপ
উচ্চ রক্তচাপ মানেই শিরার গায়ে রক্তের জোরে আঘাত, আর এ জন্য হূৎপিণ্ডের বেশি পরিশ্রম করতে হয় এবং শেষে হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। উচ্চ রক্তচাপ মানেই হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি। এসব ঝুঁকি কমাতে শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং ফলমূল ও সবজি বেশি পরিমাণ, কিন্তু লবণ কম খেতে হবে। রাতে বেশি না খেয়ে সন্ধ্যা রাতে স্বাভাবিক খেয়ে কাজকর্ম করতে হবে। খাবারের অন্তত দুই ঘণ্টা পরে বিছানায় যেতে হবে, শোবার আগে দু-একটি ফল খাওয়া যাবে।

ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস হচ্ছে রক্তে অধিক শর্করা, যা ইনসুলিনের অভাবে শরীরের কোষগুলো গ্রহণ করতে পারে না। ডায়াবেটিস (টাইপ-১) হচ্ছে, জন্মগত অগ্ন্যাশয়ের ত্রুটি অর্থাৎ ইনসুলিন তৈরির অভাবে রোগীর মৃত্যু অবধারিত এবং ডায়াবেটিস (টাইপ-২) হচ্ছে বয়স্কদের ডায়াবেটিস, অর্থাৎ ইনসুলিন তৈরি হলেও বিভিন্ন কারণে তা সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না; যাকে বলা হয় মেটাবলিক সিনড্রোম, যা ৪০-৪৫ বছর বয়সে সাধারণত হয়ে থাকে। তবে অধিক ওজন, অপরিশ্রমী ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের জন্য পরিণত বয়সের আগেই তা দেখা দিতে পারে।

রক্তে চর্বির আধিক্য
অধিক চর্বি বিশেষ করে পশুর চর্বি ও অধিক শর্করা, অর্থাৎ চিনিজাতীয় খাবার আমাদের ক্ষতি করছে অনেক বেশি। ভাত ও আলু উভয়েই গ্লুকোজে পরিণত হয়ে শরীরের শক্তি জোগায়। কিন্তু অতিরিক্ত শর্করা শেষে চর্বি হিসেবে জমা হতে থাকে, যার পরিণতি ঝুঁকিপূর্ণ। অতিরিক্ত ক্যালোরি শুধু তিনিই গ্রহণ করতে পারেন, যিনি অতিরিক্ত পরিশ্রমী। সাধারণত, যুবক বয়সের খাদ্য ক্যালোরির অন্তত এক-চতুর্থাংশ কম হবে পরিণত বয়সে। যুব বয়সে প্রতিদিন ক্যালোরির পরিমাণ যদি ২৪০০-২৬০০ কিলো ক্যালোরি হয়, তবে পরিণত বয়সে তা দাঁড়াবে প্রায় ১৮০০ কিলো ক্যালোরিতে। শরীরের মধ্যখানে অর্থাৎ প্রধানত পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়া ও ওজন বৃদ্ধি পাওয়াই হলো সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান।

পরামর্শ
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বিশেষ করে শরীরের কেন্দ্রস্থলে বা পেটে মেদ হলে তা ঝরাতে হবে। অসম খাদ্য বিশেষ করে ফাস্টফুড, চর্বি জাতীয় খাদ্য, লবণ ও শর্করা খাওয়া কমাতে হবে। শর্করানির্ভর কোমল পানীয় ও অধিক মিষ্টি-মিষ্টান্ন ক্ষতি করে অনেক বেশি। মিষ্টি বা মিষ্টান্ন ও ভূরিভোজ কালচার অর্থাৎ সামাজিক অভ্যাসও পরিবর্তন করতে হবে। দাওয়াতের সঙ্গে মাংসের পরিবর্তে মাছ, সবজি ও ফলের ব্যবস্থা রাখা একান্তই প্রয়োজন। দাওয়াত মানেই রিচ ফুড নয়, বরং স্বাস্থ্যের উপযোগী খাদ্য হওয়া চাই। শারীরিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাওয়াতে না খাওয়া বা নামমাত্র খাওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনীয় পরিশ্রম অর্থাৎ প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট জোরে হাঁটা, মাঝারি পরিশ্রমের খেলাধুলা, বাগান বা বাড়ির কাজ করা ও দুশ্চিন্তা কমানো হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে পারে। ১৮ বছরের ঊর্ধ্ব জনসাধারণের মধ্যে আমেরিকায় বর্তমানে এক-তৃতীয়াংশ উচ্চ রক্তচাপে ভোগে। আমাদের দেশে উচ্চ রক্তচাপের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। একজন পাঁচ ফুট উচ্চতার মহিলার ওজন ১০০ পাউন্ড ও একজন সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার পুরুষের ওজন ১২০ পাউন্ড হওয়া উচিত। উচ্চ রক্তচাপ একটি জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সমস্যা, তাই সমগ্র জনগোষ্ঠীর রক্তচাপ তিন-পাঁচ মিমি পারদ পরিমাণ কমাতে পারলে অসংক্রামক রোগগুলো, যা বর্তমান সভ্যতায় দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে যথা—হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, ক্যানসার ইত্যাদি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

ডা. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ১০, ২০১০
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection