প্রত্যাশিত গড় আয়ু তো বেড়েছে মানুষের পৃথিবীজুড়ে। এমনকি আমাদের দেশেও বেশ বেড়েছে। এখন তা ৬৫-এরও বেশি। তাই বুড়ো মানুষ বাড়বে এ দেশেও। এ নিয়ে তেমন কেউ ভাবছেন বলে মনে হয় না। এমন হয় যে স্বাস্থ্য নিয়ে হোক, নিরাপত্তা নিয়ে হোক, ৬০ বছর বয়স পেরোলে গুরুত্ব কমে যাওয়ায় অনেকে বেশ অসুখী হয়ে পড়েন, কিন্তু তা তো হওয়া উচিত নয়। জীবনের মূল নীতিগুলো অনুসরণ করলে তেমন হবে কেন? আছে কিছু পরামর্শ বিজ্ঞজনের, মেনে দেখুন। লাবণ্যময় বার্ধক্য উপভোগ করা এবং চাকরি থেকে অবসরের পরও আনন্দে থাকা কিছুটা হলেও সম্ভব হতে পারে।
কখনো বলবেন না যে বুড়ো হয়েছি
বয়স তিন রকম—ক্রমান্বয়িক, জৈবিক ও মনোগত। প্রথমটি গণনা করা যায় জন্মদিনের তারিখের ওপর ভিত্তি করে—কত বয়স হলো। দ্বিতীয়টি গণনা করা যায় স্বাস্থ্যের অবস্থা অনুযায়ী, আর পরেরটা হলো আপনার মনের বয়সের ওপর নির্ভর করে গণনা করা। প্রথম ধরনের বয়সের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই আমাদের। স্বাস্থ্যের খেয়ালও রাখতে পারি ভালো খাদ্য, ব্যায়াম করে মন প্রফুল্ল রেখে। জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আশাবাদী চিন্তাভাবনা থাকলে মনের বয়সকেও দমিয়ে রাখা যায়।
স্বাস্থ্য অমূল্য ধন
নিজের আত্মীয়স্বজন ও ছেলেমেয়েদের যদি সত্যি ভালোবাসেন, তাহলে নিজের স্বাস্থ্যের দেখভাল হওয়া উচিত অগ্রাধিকার। তাহলে আপনি বুড়ো বয়সে তাদের বোঝা হবেন না। বছরে একবার অন্তত হেলথ চেকআপ এবং নিয়মিত ব্যবস্থাপত্রে দেওয়া ওষুধ সেবন করুন।
শিথিলায়ন ও বিনোদন
শরীর-মন শিথিল করা ও বিনোদনের জন্য ঈশ্বর ভজন, সুনিদ্রা, সংগীত ও ভ্রমণ এবং হাস্যপরিহাস হলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখুন, সুনিদ্রার চেষ্টা করুন, ভালো গান শোনার অভ্যাস করুন এবং জীবনের মজার দিকটা দেখার চেষ্টা করুন।
ভুলে যাওয়া ও ক্ষমা করে দেওয়া
অন্যে ভুল করলেও এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করা ঠিক না। তবে এক গালে চড় খেলে অন্য গাল পেতে দেওয়ার মতো মহাত্মাও আমরা নই। তবে নিজের স্বাস্থ্য ও সুখের জন্য এসব ভুলে যাওয়া উচিত ও ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। তা না হলে কেবল রক্তচাপই বাড়বে।
প্রতিটি জিনিসের রয়েছে উদ্দেশ্য
জীবন যেভাবে আসে, সেভাবেই একে গ্রহণ করা ভালো। নিজেকেও সেভাবে গ্রহণ করা উচিত, অন্যদেরও। কৃত্রিমতার স্থান নেই জীবনে।
মৃত্যুভয় অতিক্রম করতে হবে
মৃত্যু অবধারিত। আমাদের মনে রাখতে হবে, একদিন আমাদের সবাইকে এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। তবু আমরা ভাবি, আমাদের জীবনসঙ্গী এবং সন্তানেরা এ শোক সহ্য করতে পারবে না। কিন্তু সত্য কথাটি হলো, স্বজনেরা বিষণ্ন্ন ও শোকাহত হবে কিছুকাল, এরপর সবাই ফিরে যাবে নিজের জীবনে। সময় সবকিছুকে নিরাময় করে, ক্ষত শুকিয়ে যায়, জীবন চলে নিরবধি।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২৭, ২০১১