মৃত ব্যক্তির ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজন বা মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে আমরা অনেক সময় অস্বস্তি বোধ করি। কারণ আমরা ঠিক বুঝে উঠি না, ওখানে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কী রকম আচরণ করা উচিত বা তাঁদের জন্য আমাদের করণীয়ই বা কী।
এ বিষয়ে কয়েকটি টিপস দেওয়া হলো। এগুলো আপনাকে সাহায্য করবে।
আপনার উপস্থিতিই যথেষ্ট: কারও মৃত্যুর পর তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা স্বভাবতই খুব মুষড়ে পড়েন। অথচ বাস্তবতার কারণে তাঁদেরই মৃত ব্যক্তির সৎকারের সব ব্যবস্থা করতে হয়। এ বিষয়টি তাঁদের মধ্যে চাপের সৃষ্টি করে। এ সময় সহানুভূতিশীল কাউকে সঙ্গে পেলে ব্যক্তি অনেক আশ্বস্ত বোধ করে। তাই মৃত ব্যক্তির জন্য আগরবাতি আনা, খাটিয়া, কাফনের কাপড়, গাড়ি আনা এসব কাজে আত্মীয়দের সঙ্গ দিন। স্রেফ তাঁদের পাশে থাকাই যথেষ্ট। মৃত ব্যক্তিকে সৎকারের পর বাসায় ফেরার সময়ও আত্মীয়দের সঙ্গে আসুন। পরবর্তী সময়ে তাঁরা কবর জিয়ারত করতে চাইলে সঙ্গে থাকুন।
মনোযোগ দিয়ে শুনুন? মনোযোগ ও সহানুভূতির সঙ্গে মানুষের কথা শোনা একটা বড় গুণ। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়দের মনে অনেক দুঃখ-কষ্ট জমা থাকে। নানা স্মৃতি তাঁদের আলোড়িত করে। এসব বিষয় তাঁরা অন্যের কাছে বলতে পারলে হালকা বোধ করেন। তাই তাঁদের কথা মন দিয়ে শুনুন। সত্যি, আমি দুঃখিত বা আমি তোমাদের অবস্থা বুঝতে পারছি—এ ধরনের সামান্য উক্তি করে আপনি তাঁদের কথা বলতে উৎসাহিত করতে পারেন।
কথা না বলেও সহানুভূতি প্রকাশ করুন: সব সময় যে কথার মাধ্যমে সহানুভূতি প্রকাশ করতে হবে তা নয়। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়দের কাঁধে হাত রাখলেন বা হাত ধরে আলতোভাবে চাপ দিলেন, বা তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন—কথা না বলে এভাবেও আপনি তাঁদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করতে পারেন। এ রকম একটু ছোঁয়া অনেক সময় হাজার কথার সমান কাজ করে।
নিজে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়বেন না: মৃত ব্যক্তির আত্মীয়দের সাহায্য করতে গিয়ে আপনি নিজে দুঃখভারাক্রান্ত হয়ে পড়লে সাহায্য করতে পারবেন না। অবশ্যই তাঁদের দুঃখ আপনি ভাগ করে নেবেন; কিন্তু নিজেকে সংযত রেখে। তাঁদের প্রতি উদারভাবে ভালোবাসাপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করুন। এতেই আপনার উপস্থিতি আত্মীয়দের জন্য স্বস্তির উৎস হয়ে উঠবে।
ডা. জিল্লুর কামাল
সহকারী অধ্যাপক
জাতীয়মানসিক স্বাস্থ্যইনস্টিটিউট, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২৭, ২০১১