Author Topic: উচ্চ রক্তচাপ ও নারীস্বাস্থ্য  (Read 4791 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
রক্তচাপের ওঠানামা অথবা উচ্চ রক্তচাপ-এসব সমস্যা পৃথিবীজুড়েই রয়েছে। আমাদের দেশেও উচ্চ রক্তচাপ একটি সমস্যা এবং নারীদের মধ্যে তো বটেই। তবে এ ক্ষেত্রে রয়েছে অনুমাননির্ভর তথ্য, সারা দেশের পরিসংখ্যান চিত্র আছে বলে মনে হয় না। পেশাজীবী চিকিৎসকেরা অনেক রোগী পান-এ তথ্যটি সঠিক।
একটা ব্যাপার লক্ষ করা গেছে, যেসব নারীর উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই স্থূল এবং তাদের রক্তে কোলেস্টেরলও বেশি। পুরুষদের তুলনায় নারীরা রক্তচাপের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমর্থ হয় কম। বিশ্বজুড়ে সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও দেখা গেছে, পুরুষদের তুলনায় নারীরা এসপিরিন বড়ি, রক্তচাপ কমানোর ওষুধ এবং কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ গ্রহণও করে কম।
এসব ফলাফল লক্ষ করে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন নারীদের জন্য ‘গো রেড ফর উইম্যান’ অভিযান পরিচালনায় তাগিদ অনুভব করেছে। এ অভিযানের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ ‘পুরুষালি রোগ’, এমন ধারণা বদলানোর চেষ্টা করা হবে। আবার আমেরিকার একটি পরিসংখ্যান-সে দেশেও হৃদরোগ হলো নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য এক নম্বর ঘাতক। প্রতিবছর চার লাখ ৮০ হাজার নারী হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করে পুরুষের তুলনায় বেশি অথবা মৃত্যুর অন্য চারটি কারণের সম্মিলিত ফলাফলের চেয়ে বেশি, বলছে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ বা ‘হাইপারটেনশন’ দেহের নানা যন্ত্রের অপূরণীয় ক্ষতি ঘটাতে পারে, ঘটাতে পারে নানা রোগ। এ থেকে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, হার্ট ফেইলিওর, কিডনির বিকল হওয়া, অন্ধত্ব এবং আরও অনেক রোগ।
এ রকম পরিণতি হওয়া সত্ত্বেও নারীদের একটি বড় অংশের উচ্চ রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত থেকে যায়। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারস ওম্যানস হার্ট প্রোগ্রামের মেডিকেল ডিরেক্টর ডা· নিয়েকা গোল্ডবার্গ বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের মাত্র ৬০ শতাংশ নারীর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। রক্তচাপ কমানো গেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায় এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে ২৫ শতাংশ।’
এ সমস্যার আংশিক কারণ হলো, নারীদের সিসটোলিক রক্তচাপ অনেক ক্ষেত্রে বেশি, বলেন আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা· ড্যানিয়েল জোনস। হৃৎপিণ্ড যখন স্পন্দিত হয় এবং এরপর বিশ্রাম নেয়, তখন ধমনির দেয়ালে রক্তের যে চাপ, তা-ই হলো ‘রক্তচাপ’। এই পরিমাপে আমরা পাই দুটো মান, সিসটোলিক রক্তচাপ বা ওপরের সংখ্যা হলো এমন চাপমান, যখন হৃৎপিণ্ড স্পন্দিত হয় এবং রক্তকে সবলে দেহে ছড়িয়ে দেয়। ডায়াসটোলিক চাপ হলো নিচের সংখ্যা এবং দুটো স্পন্দনের মাঝামাঝি সময় যখন হৃৎপিণ্ড বিশ্রাম নেয়, তখন সর্বনি্ন যে চাপ।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, আদর্শ রক্তচাপ হলো ১২০/৮০ মি·মি· পারদ। ডা· জোনস আরও বলেন, ওষুধ দিয়ে সিসটোলিক উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ নয়। বিশেষ কোনো ওষুধে সমস্যা হলে আমাদের রয়েছে নানা ধরনের রক্তচাপের ওষুধ। তাই বিকল্প ওষুধের অভাব নেই।
উচ্চ রক্তচাপ হলো পুরুষের রোগ, এমন ভ্রান্ত ধারণার জন্য চিকিৎসার গুরুত্ব অনেক সময় হ্রাস পায় নারীদের ক্ষেত্রে। অনেক সময় চিকিৎসকের চেম্বারে নারীর স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে কথাবার্তা কম হয়। ‘আমার রক্তচাপ কত’ এমন প্রশ্ন একজন নারীর করা উচিত এবং সে ক্ষেত্রে বেশি হলে বা সামান্য বেশি হলে কী কী করা উচিত-এ ব্যাপারে চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে আলোচনা হওয়া উচিত।
জোনস আরও বলেন, রক্তচাপ কমানোর জন্য বা রক্তচাপ যাতে না বাড়ে, সে জন্য জীবন যাপনে যেসব পরিবর্তন প্রয়োজন হয়, একে নারীদের অবহেলা করা উচিত নয়। অনেক সময় ছোটখাটো পরিবর্তন অনেক জোরালো প্রভাব ফেলতে পারে রক্তচাপের ওপর। উচ্চ রক্তচাপের ওপর বড় রকমের প্রভাব রয়েছে খাওয়াদাওয়ার।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৫ বা এর ঊর্ধ্বে যাঁদের বয়স, এমন নারীরা চর্বি কম খাবার খাওয়ায় তাঁদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি অনেক কমেছে। চর্বি কম থাকা দুগ্ধজাত খাদ্য ভালো। কারণ এতে আরও রয়েছে ক্যালসিয়াম, যা হাড়ের জন্য ভালো। তাই হিতকরী ফল আরও বেশি। খাবারে চর্বি ও লবণ কমানো অত্যন্ত উপকারী।
ভাজা খাবারের চেয়ে গ্রিল করা খাবার ভালো। কারণ, ভাজা খাবারে যে মসলাপাতি থাকে, এতে প্রচুর লবণ থাকে। হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের সার্বিক ঝুঁকি কমানোর জন্য ধূমপান বর্জন করতেই হবে। স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন, প্রয়োজনে ওষুধ, নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় বিষয়।
যে খাবারে নুন কম, যে খাবার ফল-শাকসবজিসমৃদ্ধ, কম চর্বি দুগ্ধজাত খাবারের অংশ, এ খাবার খেলে রক্তচাপ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ দুটোই সম্ভব। জীবন যাপনে ছোটখাটো পরিবর্তন বড় রকমের তারতম্য ঘটাতে পারে।

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ২০, ২০০৮
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection