Author Topic: মেডিক্যাল কেস হিস্ট্রিঃ শিশুকে নিরাপদ  (Read 7950 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
যে কথা বলব বলব করেও বেশ ক’টি বছর কেটে গেল, তা আজ বলার জন্য কলম নিয়ে বসলাম। কথাটি গোপনীয় সন্দেহ নেই­ কিন্তু আমাদের সবারই বোধ হয় জানা উচিত। আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগের ঘটনা। আমি তখন ঢাকার মহাখালী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের বাংলো প্যাটার্নের বাসায় থাকি। ঝিলের পাড়ে সুন্দর বাসা। নিরিবিলি একটা পরিবেশে। সবুজের শ্যামলিমা চার দিক ছেয়ে আছে। মাঝখানে ঝিলের স্বচ্ছ পানির ঢেউ, তাতে সূর্যের শেষ বিকেলের পড়ন্ত রোদে ঝির ঝির স্নিগ্ধ বাতাসে শরীর জুড়িয়ে যায়, মনের শ্রান্তি-ক্লান্তি ধুয়েমুছে যায়। আজো চোখ বন্ধ করলে সেই ছোট্ট ছবির মতো বাংলো প্যাটার্নের বাড়ি, সামনের সবুজের মেলা, ঝিল আর জ্যোস্নার আলোতে ঝিলের জলে সুস্নিগ্ধ ছায়া সব মিলিয়ে একটা স্বপ্নীল পরিবেশ মনের আয়নায় ভেসে ওঠে।

তখনকার কথা, মানে ১২ বছর আগের ঘটনা। তবু মনে হয় যেন আজ-কালের মধ্যেই ঘটেছে ঘটনা। এক দিন দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর সবাই দিবা নিদ্রায় মগ্ন। হঠাৎ মনে হলো পাশের বাসায় চেঁচামেচি-চিৎকার। একটু পর পাশের বাসায় ভদ্র মহিলা তার ছয়-সাত মাসের ছোট্ট ফুটফুটে ফুলের মতো সুন্দর মেয়েটিকে কোলে নিয়ে ছুটতে ছুটতে আমার কাছে এলেন।
ডাক্তার আপা, দেখুন তো মোনার গোপন অঙ্গ থেকে রক্ত ঝড়ছে কেন?
বলা বাহুল্য, মোনা ওই ছোট্ট মেয়েটির নাম। মোনা চিৎকার করে কাঁদছে। মা কিছুতেই মেয়েকে শান্ত করতে পারছেন না। অবশেষে মুখে মাই গুঁজে দিয়ে কোনো রকমে শান্ত করলেন ছোট্ট মোনাকে। আমি তাকে পরীক্ষা করে দেখলাম।

সত্যি সত্যি মোনার যোনি পথ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত ঝরে পড়ছে এবং অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, এটুকুন মেয়ের যোনি পথ নখ দিয়ে ঘেটে কেউ ছিঁড়ে ফেলেছে বলে মনে হলো আমার।

ভাবী, মেয়ে কোথায় ছিল? এমন হলো কী করে?

ভদ্র মহিলা কাঁদতে কাঁদতে ঘটনা আনুপূর্বিক বর্ণনা করলেন। বললেন, সারা দিনের কাজের পর রান্নাবান্না শেষে আমি গোসলখানায় ঢুকেছি। আর কাজের মেয়েটা ঘরদোর ঝাড় দেয়ার পর নেকড়া ভিজিয়ে পানি দিয়ে মুছে দিচ্ছে।
আপনার ভাইয়ের ফিরতে দেরি হয় বলে আমরা খাওয়া-দাওয়া একটু দেরিতেই করি। মেয়েটা খাটের ওপর ঘমাচ্ছিল। কাজের মেয়ে আছিয়ার ১০ বছরের একটা ছেলে আছে। ও ফাইফরমাশ খাটে। আমাদের ঘরেই খায়দায় ওর মায়ের সাথে। মেয়ে ঘুমাচ্ছে বলে আমি আছিয়াকে খেয়াল রাখতে বলে গোসল করতে গেলাম। একটু পর শুনি মেয়ের চিৎকার। চিৎকার যেন কেমন আশঙ্কাজনক মনে হলো। আমার বুকটা কেঁপে উঠল। একটু আগেই মেয়েকে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়েছি­ এখন তো জেগে ওঠারই কথা না, এমন তীক্ষ্মভাবে চিৎকার করছে কেন? মনে হলো মেয়ে আমার খুব জোরে আঘাত পেয়েছে। আমি ভাবলাম, মেয়ে বুঝি ঘুমের ঘোরে খাট থেকে পড়ে গেছে। ছুটে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলাম। এসে দেখি মেয়ে খাটের ওপর চিৎকার করছে। আর আমাকে দেখে আছিয়ার ছেলেটি সিঁড়ি দিয়ে ছুটে পালিয়ে গেল। কাছে এসে দেখি মেয়ের বিছানা রক্তে ভেসে যাচ্ছে।
আছিয়া কোথায় ছিলে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম। আছিয়া নিচের ডাস্টবিনে ঘর ঝাড় দেয়া ময়লা ফেলতে গিয়েছিল। যাওয়ার সময় মোনাকে দেখার জন্য দরজায় ছেলেকে বসিয়ে রেখে গিয়েছিল।

আমার কী হবে, আপা? ভদ্র মহিলা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আমি ছোট্ট টুকটুকে মোনাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিলাম।

ভাগ্য ভালো যে, খুব মারাত্মক কোনো ক্ষতের সৃষ্টি হয়নি। এক সপ্তাহের মধ্যে মোনা সুস্থ হয়ে উঠল। আমি রোজ হাসপাতাল থেকে ফিরে মোনাকে দেখতে যেতাম। ছোট্ট মোনা হাত-পা ছুড়ে খেলা করছে দেখে আশ্বস্ত হয়ে বাসায় ফিরতাম।

আমরা সাধারণত ছোট্ট শিশুদের দ্বারা কোনো ক্ষতির, বিশেষ করে এই ধরনের ক্ষতির কথা চিন্তাও করি না। কিন্তু এটি ঠিক না। এই ঘটনাটি ছোট্ট হলেও মোটেও অবহেলার যোগ্য নয়। আর একটু দেরি হলে হয়তো মোনার জীবনে সংশয় দেখা দিত। তাই ঘরে যদি সন্তান থাকে, বিশেষ করে মেয়ে, তবে সব মায়েদেরকেই বলব এদিকটায় সতর্ক নজর রাখবেন।

চাইল্ড সাইকোলজি বা শিশু মনস্তত্ত্ববিদরা বলেছেন, অতি শিশুকাল থেকেই প্রত্যেকের ভেতর সুপ্ত অবস্থায় সেক্সুয়াল ইন্সটংস্ট বা যৌন ইচ্ছা সুপ্ত থাকে। এবং মাঝে মধ্যে সেই ইচ্ছাটার প্রবলতা বেড়ে যেতে পারে। তখনই আমরা তাকে বলি পারভারশন বা যৌন বিকৃতি।

কখন কোন ফুলের মতো শিশুকন্যা যে এই যৌন বিকৃতির শিকার হবে তা আমরা কেউ বলতে পারি না। কিছু দিন আগে দৈনিক ইত্তেফাকেই তো ছাপা হয়েছিল­ নয় বছরের মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং সে ধর্ষিত হয়েছে চল্লিশোর্ধ্ব একজন প্রৌঢ়ের দ্বারা। মেয়েটি লোকটির টুকটাক কাজ করে দিত। এমনি কত অবিশ্বাস্য ঘটনা যে চোখের সামনে ঘটছে তার ইয়ত্তা নেই।

সূত্রঃ দৈনিক নয়াদিগন্ত, ৩০শে ডিসেম্বর ২০০৭
লেখকঃ অধ্যাপিকা ডা. সুলতানা জাহান
চেম্বারঃ বাড়ি-৮১, রোড-৮/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা।
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection