Author Topic: রোটা ভাইরাসে শিশুর ডায়রিয়া  (Read 4781 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
শিশুরা বিভিন্ন কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ রোগে অনেক শিশুকে অকালেই মৃত্যুবরণ করতে হয়। রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া বিশ্বের একটি অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১১১ মিলিয়ন শিশু রোটা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিল। তাদের মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ছয় লাখ শিশুর মৃত্যু হয়।
এদের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে শিশুমৃত্যুর হার শতকরা ৮২ ভাগ। উন্নত দেশে মৃত্যুর হার অবশ্য অনেক কম। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় বিলম্ব এবং পুষ্টির অভাবই শিশুমৃত্যুর হার বেশি হওয়ার কারণ।

রোটা ভাইরাস কী
চারপাশে বিভিন্ন ধরনের রোগ-জীবাণু ও ভাইরাস বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এগুলো সংক্রমিত হলে রোগাক্রান্ত হয়ে থাকে।
রোটা ভাইরাস হচ্ছে রিওভাইরাইড পরিবারের একটি ভাইরাস। দেখতে চাকার মতো। ‘রোটা’ লাতিন শব্দ, অর্থ হচ্ছে ‘চাকা’।

পরিসংখ্যান
শতকরা ৯৫ ভাগ শিশুর তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে ডায়রিয়া হয় রোটাভাইরাসে। আক্রান্ত শিশুরা মারাত্মক পানিশূন্যতায় ভোগে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম এমন শিশু, যারা ডায়ারিয়ার আক্রান্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ ছিল রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত।

কীভাবে সংক্রমিত হয়
রোটা ভাইরাস মল ও মুখগহ্বর দিয়ে খাদ্যনালিতে প্রবেশ করে। এই ভাইরাস আমাদের চারপাশেই ছড়িয়ে আছে এবং একজনের কাছ থেকে অন্যজনের শরীরে প্রবেশ করে। সংক্রমিত পানি, খাবার, খেলনা ও আসবাবপত্রের মাধ্যমেও এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। রোটা ভাইরাসে সংক্রামিত হওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মানুষের শরীরে এর প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।

কী হয়
প্রথমে শুরু হয় বমি। এরপর আস্তে আস্তে পানির মতো পাতলা পায়খানা। খুব কম সময়ের মধ্যে ডায়রিয়া তীব্র আকার ধারণ করে এবং পানিশূন্যতা এত বেশি হয় যে সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া না গেলে জীবননাশের আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে।
এ ছাড়া জ্বর ও পেটব্যথাও থাকতে পারে। নয় দিন পর্যন্ত থাকতে পারে বমি ও জ্বর। ডায়রিয়া থাকতে পারে ২১ দিন।

রোটা ভাইরাস বোঝার উপায়
সংক্রামিত মল পরীক্ষা করলে এ ভাইরাস দেখা যায়। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করলে এটি দেখা যায়। এর আকৃতি চাকার মতো।

চিকিৎসা
পানিশূন্যতা পূরণ করার জন্য ঘন ঘন খাওয়ার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। পানিশূন্যতা বেশি হলে হাসপাতালে বা ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে স্যালাইন দিয়ে পানিশূন্যতা পূরণ করতে হবে। ইলেকট্রলাইট বা রক্তে খনিজ লবণ কমে গেলে তা পূরণ করতে হবে।
কোনো অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন নেই। রোটা ভাইরাসের জন্য কোনো অ্যান্টিভাইরাস ওষুধ নেই।

প্রতিষেধক
রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া থেকে মুক্ত থাকার জন্য দুভাবে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি। প্রথমত, যেসব স্থানে রোটা ভাইরাস অবস্থান করে, সেগুলো পরিষ্কার করা।
যেমন ডায়েপার, খেলনা, মল; যেসব জায়গায় ডায়েপার বদলি করা হয় (বাসায় বা ডে-কেয়ার সেন্টারে), হাত পরিষ্কার করার স্থানে, এমনকি খাবার তৈরি করার স্থানেও এই ভাইরাস পাওয়া যায়।
এটি অনেক দিন বেঁচে থাকে। এসব স্থান ও খেলনা প্রতিদিন অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। অ্যান্টিসেপটিক সাবান দিয়ে হাত ও মলদ্বার পরিষ্কার করা দরকার।
দ্বিতীয়ত, টিকা দিয়ে রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া থেকে দূরে থাকা যায়। প্রতিষেধক হিসেবে রোটা ভাইরাসের টিকাও রয়েছে।

কখন রোটা ভাইরাসের টিকা দিতে হবে
শিশুর দেড় থেকে ছয় মাস বয়সের মধ্যে। এই টিকা মুখে খাওয়ানো হয়। প্রথম ডোজ দেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ এক মাস পর দিতে হয়। টিকা দিলে রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া হবে না। তাই শিশুকে রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া থেকে মুক্ত রাখতে সময়মতো টিকা দিতে ভুলবেন না।

ডা· মো· মিজানুর রহমান
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection