Author Topic: মায়ের সচেতনতায় বাঁচবে শিশুর চোখ  (Read 3608 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
চোখের কিছু জন্মগত অস্বাভাবিক গঠন, রোগ বা লক্ষণ সম্পর্কে যদি মায়ের সাধারণ কিছু ধারণা থাকে, তবে জন্মের প্রথম মাসেই তা তাঁর কাছে ধরা পড়বে। আর সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা পেয়ে শিশু রক্ষা পাবে আগামী দিনের অনাকাঙ্ক্ষিত দৃষ্টিস্বল্পতা বা অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে। তাই তাঁকে দিতে হবে এ সম্পর্কিত কিছু প্রাথমিক জ্ঞান, যা তাঁকে করবে সচেতন। সচেতনতা তাঁর ভেতরে উদ্দীপনা জাগাবে। আর এটা তাঁকে দ্রুত চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করবে।

জন্মের পরপর শিশুর দৃষ্টি খুবই ক্ষীণ থাকে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে একটু একটু করে বাড়ে, আর পাঁচ বছর বয়সে তা স্বাভাবিক অর্থাৎ ৬/৬ হয়। এই সময়কাল বিশেষত জন্মের প্রথম মাস ও প্রথম দুই বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জন্মগত ত্রুটিগুলো এ সময়ের মধ্যেই বোঝা যাবে, চিকিৎসাও নিতে হবে। পরে চিকিৎসা নিলে ভালো ফল পাওয়া যায় না। এই সময়কালে মা শিশুর চোখ সাধারণভাবে দেখেন, যাতে জন্মগত ও পরবর্তী ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করতে পারেন, সে সম্পর্কে কিছু ধারণা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই লেখা।

জন্মের পর থেকে প্রথম মাসে মা দেখবেন শিশুর চোখ দুটো একই আকারের, নাকি না ছোট-বড়। সে মিটমিট করে তাকায় বা পলক ফেলে কি না। চোখের কালো অংশের ওপরের পর্দা (কর্নিয়া), যা স্বচ্ছ থাকার কথা তা অস্বচ্ছ বা ঘোলা কি না। আকারে স্বাভাবিকের চেয়ে বড় কি না। জন্মগত গ্লুকোমাতে এমন হতে পারে। জন্মগত গ্লুকোমার চিকিৎসা শিশু অবস্থায় শুরু না করলে সে অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
চোখের কালো অংশের কেন্দ্রে ছোট গোলক যাকে আমরা চোখের মণি (পিউপিল) বলি, তা মিচমিচে কালো কি না। জন্মগত ছানি ও রেটিনোব্লাসটোমা নামের চোখের ক্যান্সার হলে মণি সাদা রং দেখা যাবে। অনেকটা রাতে বিড়ালের চোখ যেমন দেখায়। জন্মগত ছানি সাত দিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে অপারেশন করা সবচেয়ে উত্তম। যত দেরি হবে তত অপারেশন-পরবর্তী দৃষ্টির ফলাফল খারাপ হবে, আর তা অলস চোখে পরিণত হবে। রেটিনোব্লাসটোমার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শিশু অবস্থায়ই অন্ধ এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। জন্মের দুই-তিন দিন থেকে প্রথম মাসে শিশুর চোখে প্রচুর সবুজ বা হলুদ পুঁজ আসে, চোখের পাতা ফুলে যায়, লাল হয়ে যায়, চোখ মেলে তাকাতে পারে না। একে বলে অফথালমিয়া নিওনেটোরাম। শিশু জন্মের সময় চোখে মারাত্মক সংক্রামক জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে এমন হয়। দ্রুত চিকিৎসা না নিলে কর্নিয়াতে ঘা বা আলসার হয়ে চোখ দৃষ্টিহীন হয়ে যেতে পারে। চোখ সুন্দর, শিশু তাকাচ্ছে, চোখ লালও নয়; কিন্তু ১৫ থেকে ২০ দিন বয়সে এক বা উভয় চোখে পানি আসছে। অনেকের মধ্যে একটা ধারণা প্রচলিত আছে, চোখে মায়ের বুকের দুধ গেলে এমন পানি পড়ে এবং এটা এমনিতেই সেরে যাবে। কিছুদিনের মধ্যে পানির সঙ্গে পুঁজ আসে। এটা জন্মগত নেত্রনালির সমস্যা, যা জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়ে জটিল আকার ধারণ করে ফোঁড়া হয়ে যেতে পারে। প্রথম থেকেই এর চিকিৎসা নিলে প্রায় সবাই ভালো হয়ে যায়। কারও কারও ছয় থেকে নয় মাস সময় লাগে ভালো হতে। অন্যথায় অপারেশনের প্রয়োজন হয়। শিশু কোনো উজ্জ্বল রঙিন খেলনা বা আলোর দিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকাতে শেখে এক থেকে দেড় মাস বয়সে, একে ফিক্সেসন বলে। দৃষ্টির উন্নতির এটাই প্রথম ধাপ। এ সময় লক্ষ করলে সহজেই বোঝা যাবে, দুটো চোখ সমানভাবে এদিক-ওদিক নড়ছে অথবা ট্যারা বা ট্যারা ভাব আছে কি না। এটা জন্ম থেকেও থাকতে পারে, আবার দুই বছর বয়সের মধ্যে ধরা পড়তে পারে। শিশুর যেদিনই ট্যারা চোখ ধরা পড়বে, তাৎক্ষণিক চোখের চিকিৎসক দেখাতে হবে। বিলম্বে চিকিৎসায় দৃষ্টিস্বল্পতা বা অলস চোখে পরিণত হতে পারে। পরবর্তী জীবনে চোখ অপারেশন করে ট্যারা চোখ সোজা করা যায় সত্য, কিন্তু হারানো দৃষ্টি ফিরে আসে না।

ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবজনিত চোখের অন্ধত্ব এখন অনেক কমে গেছে। ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব হলে রাতকানা হয় এটা সবাই জানে। চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে তাও জানা, কিন্তু কীভাবে পর্যায়ক্রমে চোখ অন্ধ হয়, তা জানা জরুরি। এটা কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই জানে না। ছয় মাস বা এক বছর বয়সের শিশুর ‘রাতকানা’ ধরা পড়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, তাকে রাতে চলাফেরা করতে হয় না। মায়ের কোলেই থাকে। রাতকানার পরের যে উপসর্গগুলো চোখের অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যায় তা যে ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে হচ্ছে, তা খুব কম লোকের জানা আছে। রাতকানার পরের ধাপ হলো জেরোফথালমিয়া চোখের কর্নিয়া, কনজাংটাইভা শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে যায়, সাদা অংশের দুই পাশে মাছের আঁশের মতো জমে। পরবর্তী ধাপ কেরাটোম্যালাসিয়া-কর্নিয়া সাদা হয়ে গলে যায়, ফুটো হয়, চোখ অন্ধ হয়ে যায়। এর যেকোনো পর্যায়ে ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ালে অতি দ্রুত অবস্থার উন্নতি হয়। কনজাংটাইভা ও কর্নিয়ায় সাদা দাগ দেখামাত্র ভিটামিন ‘এ’ খাওয়া শুরু করতে হবে ও চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশু হাঁটতে শেখে। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত কোনো আচরণে যদি বোঝা যায়, সে স্বাভাবিকের চেয়ে কম দেখে, যেমন-হাঁটতে হোঁচট খাওয়া, কিছু কাছে গিয়ে দেখার প্রবণতা, বই চোখের খুব কাছে নিয়ে পড়া, চোখে পাতা কুঁচকে কোনো কিছুর দিকে তাকানো, খেতে গিয়ে থালার বাইরে হাত পড়া, গ্লাস ধরতে পানি ফেলে দেওয়া, চলার সময় সব সময় মায়ের আঁচল খামচি দিয়ে ধরে রাখা বিশেষত রাতে, তাহলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

বিষয়গুলো জটিলও নয়। শুধু এর গুরুত্ব হৃদয়ঙ্গম করতে হবে। মাকে সচেতন করতে গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য মাঠকর্মী, গর্ভকালীন পরিচর্যাকারী নিরীক্ষা বার্তাগুলো পৌঁছে দিতে পারে সহজে। আর তা মায়ের মনে গেঁথে থাকবে। সন্তানের মঙ্গলের জন্য প্রয়োজন হলে নিজ উদ্যোগে চিকিৎসক দেখাবেন পরিবার, দেশ ও জাতি শিশু অবস্থা থেকে সারা জীবনের দৃষ্টিস্বল্পতা আর অন্ধত্ব থেকে রক্ষা পেতে।

এ কে খান
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (চক্ষু)
গণস্বাস্থ্য স·ভি মেডিকেল কলেজ, সাভার ও ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০৩, ২০০৯
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection