Author Topic: স্বাস্থ্যকর জীবনরীতি – নিরামিষ ভোজন  (Read 3269 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
নিরামিষ ভোজন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অন্যতম উপায়, সন্দেহ নেই। এ দেশে নিরামিষ খাওয়ার চল বাড়ছে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ৪০ লাখ লোক নিরামিষভোজী। নিরামিষভোজীদের বডি মাস ইনডেস্ক (বিএমআই) কম, কোলেস্টেরল কম, টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও করোনারি হূদরোগের ঝুঁকি কম।

শুরু হোক, নিরামিষ আছে নানা রকমের
নিরামিষভোজীরা মাছ-মাংস আহার করেন না। কোনো কোনো নিরামিষভোজী ডিম, দুধ ও দুধজাত খাবারও খান। আবার কেউ দুধ, দধি খান; তবে ডিম খান না। একেবারে কট্টর নিরামিষভোজীরা কেবল উদ্ভিজ্জ খাদ্য গ্রহণ করেন, কেবল শাকসবজি। প্রাণিজ কোনো কিছু—মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, মধু কিছুই তাঁরা খান না। যে পথেই যান না কেন, খাবারের মধ্যে অগ্রাধিকার পাবে প্রোটিন (উদ্ভিজ্জ), লৌহ, ক্যালসিয়াম, দস্তা ও ভিটামিন বি ১২।

থাকবে প্রোটিন
মাংসে যে প্রোটিন আছে তা থেকে পাওয়া শরীরের চাহিদামতো সব আবশ্যকীয় অ্যামিনো এসিড। তবে নিরামিষ খাদ্যে সব অ্যামিনো এসিড থাকে না। তাই নানা প্রোটিন পেতে হলে খেতে হবে বিচিত্র রকমের বাদাম, বীজ, ডাল, মটরশুঁটি ও শস্য। যেমন মটরশুঁটিতে আছে প্রচুর অ্যামিনো এসিড, লাইসিন। তবে এতে রয়েছে খুব কম সালফারসমৃদ্ধ অ্যামিনো এসিড, আবার শস্যে এর বিপরীত। তাই ডাল, চাল ও মটরশুঁটির খিচুড়ি উপাদেয় ও প্রোটিনসমৃদ্ধ।

সয়া দিয়ে পরিপূরণ
সয়াদ্রব্য হলো প্রোটিনের বড় উৎস। মাংসের পরিপূরকও বটে। সয়া দিয়ে সবজি রান্না খেতে বেশ ভালো।

সবজি দিয়ে মাংসের মতো রেসিপি তৈরি হয়
যেমন এঁচোড়ের রান্না। খুব মজা। কাঁচকলার কোপ্তা। কাঁকরোলের পুর। পোস্ত বড়া। ডালের বড়া। শিম দিয়েও বাহারি রান্না। সঙ্গে পালংশাক, ধনেশাক, কলমিশাক। সবজির কাটলেটও মজা। পটলের দোলমাও মজা। এসব খেলে মাংস খেতে ইচ্ছে করবে না।

সবজি দিয়ে আরও সব রান্না
সবজি দিয়ে ভর্তা খেতে মজা, বেগুন ভর্তা, আলু ভর্তা, শিম ভর্তা, টমেটো ভর্তা। শিমের বিচি, ডাল, চাল, মরিচ দিয়ে চমৎকার খিচুড়ি।
সবজি ওমলেট তৈরি করা যায় গাজর, মাশরুম, পালংশাক দিয়ে। পাটশাক ভাজাও মজাদার। সয়াটফু, সালাদ, শর্ষে বাটা, লংকামরিচ বেশ মজার রেসিপি।
লেটুস, টমেটো, মাশরুম, পনির ও রুটি দিয়ে বার্গার।
নানা রকম সবজি, সয়া, শস্য দিয়ে চমৎকার বার্গার হয়।
সবজি শাক যাঁরা খান তাঁরা হন ক্ষীণতনু এবং অনেক রোগও তাদের হয় না।
নিরামিষভোজী হলে খাদ্যে থাকে প্রচুর ফাইটোকেমিক্যালস। এগুলো আছে রঙিন ফল ও সবজিতে, যেমন ব্রকোলিতে আছে ল্যুটিন ও টমেটোতে আছে লাইকোপিন। ফাইটোকেমিক্যাল হলো শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যানসাররোধী।

ঘাটতি ও ত্রুটি
সুপরিমিত ও সুমিত নিরামিষ না হলে নিরামিষভোজীরা কিছু ভিটামিন ও খনিজ যেমন লোহা, ভিটামিন বি১২, দস্তা, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি-এর ঘাটতিতে পড়েন। যাঁরা কট্টর নিরামিষাশী এঁদের এমন ঝুঁকি খুব বেশি। তাই পরিপূরণ প্রয়োজন হয়।

ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি
দুধ, দধি, পনির খেলে পাওয়া যায় পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম, হাড় থাকে মজবুত। কিন্তু কট্টর নিরামিষাশী হলে বিকল্প ক্যালসিয়াম চাই। যেমন ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ সয়াদুধ, কমলার রস, বীজ, বাদাম ও কোনো কোনো সবজি। যাঁরা দুধজাত খাদ্য খান না এঁদের ভিটামিন-ডি ঘাটতিও হয়। রৌদ্রোলোকে এ ভিটামিন তৈরি হয় ত্বকে, তবে যাঁরা রোদে যান না তাঁদের হয় সমস্যা।

দস্তা
দস্তা নানা রকম নিরামিষ খাবারে পাওয়া গেলেও মাংসের দস্তার মতো তা দেহে তেমন শোষিত হয় না। দুধ, পনির, গোটা শস্যখাদ্য, বাদাম, সয়া খাবার, শুঁটি—এসবে আছে বেশ দস্তা।

লোহা
লাল মাংসে প্রচুর লোহা। তবে এই গুরুত্বপূর্ণ খনিজ আছে পত্রবহুল সবুজ শাকসবজি, রান্না করা শুষ্ক বিনস, শস্যখাদ্যে। তবে উদ্ভিজ্জজাতলোহা শোষিত হয় কম। তাই নিয়মিত খেতে হবে লোহাসমৃদ্ধ সবজি ও সঙ্গে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাদ্য। ভিটামিন-সি লোহা শোষণ ত্বরান্বিত করে।

ওমেগা ও মেদ অম্ল
ওমেগা ও মেদ অম্ল হলো স্বাস্থ্যকর চর্বি, কমায় রক্তচাপ, হূদহিতকরও বটে। তৈলাক্ত মাছ ও ডিমে আছে এই মেদ অম্ল। কুমড়ার বিচি, তিসি, ওয়ালনাট, সয়াবিন তেলেও আছে মেদ অম্ল।

ভিটামিন-বি১২
ভিটামিন-বি১২ কমে গেলে পেশি দুর্বল হয় ও ক্লান্তি ভর করে। এই ভিটামিন পাওয়া যায় কেবল প্রাণিজ খাদ্য যেমন মাংস, ডিম ও দুধজাত খাবারে। তাই কট্টর নিরামিষাশীদের খেতে হবে সাপ্লিমেন্ট।
শিশুদের জন্যও নিরামিষ খাদ্য স্বাস্থ্যকর। বাদাম, বীজ, শস্য, শাকসবজি, ঘি, দুধ, দুধজাত দ্রব্য, ডিম ভালো পুষ্টির উৎস।
অনেকে আবার মাঝেমধ্যে নিরামিষাশী হন। সাত দিনের প্রতিদিন নিরামিষ খেতে হবে কেন? সপ্তাহে দুদিন মাছ-মাংস খাবেন না!
এতে সম্পৃক্ত চর্বি-কোলেস্টেরল খাওয়াও কমবে।
সবজি-শাক উদ্ভিজ্জ, প্রচুর পুষ্টিও পাওয়া যাবে।

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ১৫, ২০১১
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection