Author Topic: শিশুর মাথা অস্বাভাবিক বড় নয়তো!  (Read 4510 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
চার বছর বয়স নাবিলের (ছদ্মনাম)। এখনো কথা বলে না, তবে কিছু কিছু বোঝে। হাঁটা বা বসা দূরে থাক, একা একা কাত হতে পারে না। ঘাড়ও খুব একটা শক্ত হয়নি। কারণ কী?
নাবিল মা-বাবার দ্বিতীয় সন্তান। গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে তার মায়ের প্রস্রাবে প্রদাহ হয়েছিল এবং চিকিত্সকের পরামর্শেই দুই সপ্তাহ অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েছিলেন। নরমাল ডেলিভারিতে নাবিলের জন্ম। জন্মের পরপরই কান্না করেছিল। কিন্তু বয়স যখন এক সপ্তাহ, তখন তার জ্বর হয়, সঙ্গে খিঁচুনি। হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সাত দিন অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছিল। সম্পূর্ণ সুস্থও হয়ে ওঠে সে। দেড় মাস যখন তার বয়স, মা খেয়াল করলেন, নাবিলের মাথার তালুটা ফুলে যাচ্ছে। তিনি তখনই চিকিত্সককে দেখান। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেল, হাইড্রোসেফালাস বা মাথার মধ্যে পানি জমেছে। চিকিত্সক বললেন, অস্ত্রোপচার করে ‘ভি-পি সান্ট’ লাগাতে হবে। মা-বাবা বললেন, একটু ভেবে দেখি এবং সবার সঙ্গে একটু আলাপ করে নিই।
দিন যায়, মাস যায়—এভাবে কাটে এক বছর। মাথা তো বেড়েই চলেছে। এদিকে নাবিলের শারীরিক ও মানসিক কোনো উন্নতি হচ্ছে না। এখনো তার ঘাড় পর্যন্ত শক্ত হয়নি। মা-বাবা আবার নিউরো সার্জনের কাছে গেলেন। তিনি বললেন, বড় দেরি করে এসেছেন। এখন অস্ত্রোপচার করলে মাথা আর বড় হবে না ঠিকই, কিন্তু খুব একটা কমবে না এবং মানসিক ও শারীরিক উন্নতি এতটা হবে না।
কারণ, এক মাস বয়সে যেটা করার কথা ছিল, সেটা এক বছর পর করা হচ্ছে। মাথার সিটিস্ক্যান করা হলো। দেখা গেল, মস্তিষ্কে এত বেশি পানি জমেছে যে এই পানির চাপে মস্তিষ্ক পাতলা হয়ে গেছে এবং মাথার হাড়ের জোড়াগুলো সব ফাঁক হয়ে গেছে।
যা-ই হোক, অস্ত্রোপচার করা হলো। মাথা আর বাড়ছে না, বরং একটু ছোটও হলো। কিন্তু মানসিক বা শারীরিক পরিবর্তন খুব একটা হলো না। কারণ, এক বছর ধরে মাথার পানি বাড়তে বাড়তে তা মস্তিষ্কের ওপর চাপ দিয়েছে এবং এতে মস্তিষ্ক পাতলা হয়ে এর কার্যক্ষমতা লোপ পেয়েছে। অথচ এই অস্ত্রোপচার যদি এক মাস বয়সে করা হতো, তাহলে মাথায় ওই অতিরিক্ত পানি জমা হতো না এবং মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা থাকত।

মস্তিষ্কের অতিরিক্ত পানি (হাইড্রোসেফালাস) কী
হাইড্রো মানে পানি এবং সেফালাস হচ্ছে মস্তিষ্ক। একসঙ্গে হয় মস্তিষ্কে অতিরিক্ত পানি। মাথার মধ্যে একটা ঝরনা আছে। এই ঝরনা থেকে সারাক্ষণ পানি বের হয়ে ভেনট্রিকেলে পড়ছে। এই পানি মস্তিষ্কের চারপাশে ঘুরে রক্তে মিশে যায়। কোনো কারণে পানি যে পথে চলাচল করে, তা বাধাপ্রাপ্ত হলে পানি আর রক্তে যেতে পারে না। তখন সেখানে পানি জমতে থাকে এবং মস্তিষ্কের ওপর চাপ দিতে থাকে। ধীরে ধীরে মস্তিষ্ক পাতলা হতে থাকে, মাথা বড় হতে থাকে এবং মাথার হাড়ের জোড়াগুলো ফাঁক হতে থাকে।

কেন এই পানি চলাচলের পথে বাধা সৃষ্টি হয় গর্ভাবস্থায় মায়ের যদি জ্বর বা ইনফেকশন হয়, তবে শিশু জন্মের সময়ই মস্তিষ্কে পানি বা হাইড্রোসেফালাই নিয়ে জন্মাতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জন্মের পর মস্তিষ্ক বা এর আবরণে প্রদাহ (এনকেফালাইটিস বা মেনিনজাইটিস) হলে পানি জমতে পারে। বিশেষ করে নবজাতকের প্রথম মাসে জ্বর হলে আমরা সব সময় মেনিনজাইটিস ধরে নিই। এই মেনিনজাইটিস রগের মধ্যে ইনজেকশন দিয়ে ঠিক হলেও দু-এক সময় মস্তিষ্কের আবরণে কিছু লোদের মতো পদার্থ রেখে যায়, যেটা পরে পানি চলাচলের পথে বাধা সৃষ্টি করে, যেমনটা নাবিলের বেলায় হয়েছিল।

চিকিত্সা
প্রাথমিক পর্যায়ে যদি থাকে, তখন ওষুধ দেওয়া হয়। তবে ব্লক যদি স্থায়ীভাবে হয়ে যায়, তখন বিকল্প পথ, যাকে বলে ভি-পি সান্ট, অর্থাত্ মস্তিষ্কের ভেন্ট্রিকেল থেকে পেটের মধ্যে একটি চ্যানেল বসানো হয়। এই পথ দিয়ে অতিরিক্ত পানি মস্তিষ্ক থেকে পেটে গিয়ে রক্তে চলে যায়। এই বিকল্প পথ যদি প্রথম অবস্থায় লাগানো হয়, তাহলে রোগীর স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর দেরি করলে উল্লিখিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে।

পরামর্শ
- খেয়াল রাখতে হবে গর্ভাবস্থায় মায়ের যেন জ্বর না হয়।
- শিশু জন্মের এক মাসের মধ্যে জ্বর হলে দ্রুত চিকিত্সকের কাছে নিন এবং জ্বর ভালো হওয়ার পরও খেয়াল রাখুন নবজাতকের মাথার তালুটা ফুলছে কি না।
- যদি ফোলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিত্সককে দেখান এবং তাঁর পরামর্শমতো চলুন।

সেলিনা ডেইজী
সহযোগী অধ্যাপক
শিশু নিউরোলজি ও ক্লিনিক্যাল
নিউরোফিজিওলজি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ
সূত্র: প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০০৯
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection