Daffodil Computers Ltd.

E-Health / Protect Your Health => E- Health For Women => Topic started by: bbasujon on January 13, 2012, 08:55:09 AM

Title: গর্ভাবস্হায় খাওয়া-দাওয়া
Post by: bbasujon on January 13, 2012, 08:55:09 AM
গর্ভাবস্হা কোনো অসুখ নয়। তাই এই অবস্হার কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন নেই। তবে গর্ভাবস্হায় যে ওষুধটির প্রয়োজন, তাহলো খাওয়া-দাওয়া। মনে রাখবেন গর্ভাবস্হায় প্রতি বেলায় বিরানি খাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা জানি, আমাদের খাদ্যগুলোকে মোটামুটিভাবে নিম্নের বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়।
যথা-১। শর্করা ২। তৈল জাতীয় পদার্থ ৩। আমিষ ৪। ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ।

ভিটামিন ও খনিজ পদার্থগুলো আমাদের বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যেই রয়েছে। বাকি খাদ্যদ্রব্যগুলোর মধ্যে আমাদের দেহ শর্করা ও তৈল জাতীয় পদার্থ তৈরি করতে পারে। আমাদের দেহ আমিষ তৈরি করতে পারে না। অথচ আমিষই আমাদের দেহের কাঠামো তৈরিতে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখে। তাই একজন গর্ভবর্তী মহিলার খাবারে অবশ্যই আমিষ থাকতে হবে। ডিম, দুধ ও মাছ-মাংসই আমিষের প্রধান উৎস। শাক-সবজি প্রচুর পরিমাণে খেলে নিয়মিত পায়খানা হয়। আর এতে ক্ষুধা ও খাওয়ার রুচি ভালো থাকে।

নিম্নে একজন গর্ভবর্তী মায়ের দৈনিক খাদ্যের একটি তালিকা দিলাম।
ডিম ১টি, দুধ আধা কেজি, মাছ-মাংস প্রতিদিন, পাঁচ মিশালি সবজি।
যাদের অর্থনৈতিক অবস্হা ভালো নয় তারা কী করবেন। আপনারা ডিম, গুঁড়োমাছ, ডাল, সিমের বিচি, শাকসবজি ইত্যাদি খেতে পারেন। আজকাল বাজারে ছোট ছোট প্যাকেট গুঁড়ো দুধ পাওয়া যায়। সব সময় না পারলেও মাঝে মাঝে এসব প্যাকেটের দুধ খেতে পারেন। এভাবে চললে আপনার বাচ্চা ধনীদের বাচ্চার মতোই সুস্হ হয়ে জন্মাতে পারে।

মনে রাখবেন আমরা যদি একটি ভালো গাড়ি চাই, তবে সবাই বলবেন ফ্যাক্টরিতে ভালো কাঁচামাল দিতে হবে। কিন্তু আমরা এটা বুঝি না যে, উত্তম খাবার না খেলে উত্তম বাচ্চা আশা করাটা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। এটা সত্য, গর্ভাবস্হায় বিভিন্ন হরমোনের প্রভাবে খাওয়ার রুচি কমে যায়। তবে আপনি যদি বোঝেন গর্ভাবস্হার প্রধান চিকিৎসা ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করা এই লক্ষ্য অর্জনে আপনি যদি চেষ্টা করেন, তবে অবশ্যই আপনি প্রয়োজনীয় খাবার খেতে পারবেন। প্রত্যেক মা-ই চাইবেন যে তার সন্তান পৃথিবীর সেরাটা হোক। আর তা যদি চান, তবে অবশ্যই আপনাকে প্রয়োজনীয় খাবার খেতে হবে। এখানে একটা কথা মনে রাখা দরকার, আর তা হলো গর্ভের সন্তানের জন্য খাবারের পরিমাণ খুব একটা বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু খাবারে উন্নত খাদ্যদ্রব্যের ব্যবস্হা রাখা। ডাক্তাররা গর্ভবর্তী মায়েদের কিছু ওষুধ দিয়ে থাকেন। এগুলো দেয়া হয় একটা লক্ষ্যে আর তা হলো যদি কোথাও কোনো কিছুর অভাব থাকে, তা যেন পুরণ হয়। আপনি যদি খাবার না খেয়ে বড় ডাক্তারের ওষুধই শুধু খান তবে বড় ভুল করবেন।

গর্ভাবস্হায় খাবার সম্বন্ধে আমাদের দেশে একটি কুসংস্কার প্রচলিত আছে, আর তা হলো বেশি বেশি ফল খেলে সন্তান ফর্সা হয়। এটা সম্পুর্ণরুপে ভুল ধারণা। কোন সন্তানের রং কেমন হবে, তা বাবা ও মায়ের জেনেটিক মিশ্রণের ফলে নির্ধারিত হয়ে থাকে। গর্ভাবস্হায় ফল খাওয়া যায়, কিন্তু কেউ যদি সন্তানকে ফর্সা করার ইচ্ছায় সারাক্ষণ ফলই খেতে থাকেন এবং প্রয়োজনীয় অন্য খাদ্যদ্রব্য বিশেষ করে আমিষ না খেয়ে থাকেন, তবে সন্তান তো ফর্সা হবেই না বরঞ্চ সন্তানের সঠিক বৃদ্ধি নাও হতে পারে। এই অবস্হাকে ডাক্তারি ভাষায় ‘গর্ভাবস্হায় সন্তানের বৃদ্ধি রোধ’ বলা হয়ে থাকে। এতে ভবিষ্যতে আপনার সন্তানের মানসিক বৃদ্ধির সমস্যাসহ আরো মানবিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

উপসংহারে আমি বলতে চাই, যদি আপনি একটি সুস্হ সন্তান আশা করেন, তবে আপনার প্রথম কাজ হবে এ সময় সুষম খাবার খাওয়া।

——————
অধ্যাপক এম আনোয়ার হোসেন
প্রসুতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
আমার দেশ, ২০ মে ২০০৮