Daffodil Computers Ltd.

E-Health / Protect Your Health => E- Health For Child => Topic started by: bbasujon on January 11, 2012, 06:19:47 PM

Title: শিশুর জন্মগত ত্রুটি রক্তনালি বিকৃতির
Post by: bbasujon on January 11, 2012, 06:19:47 PM
শিশুদের জন্মগত ত্রুটিগুলোর ভেতর রক্তনালির বিকৃতিই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। সারা বিশ্বে প্রতি ১০০ শিশুর একজন শিশু কোনো না কোনো রক্তনালির বিকৃতি নিয়ে জন্মায়। কিছু বিকৃতি শিশুর জন্মের সময় থেকেই বোঝা যায়, আবার কিছু বিকৃতি শিশুর জন্মের কিছুদিন বা সপ্তাহ দুয়েকের ভেতর ফুটে ওঠে। শিশুদের রক্তনালির বিকৃতি দেহের বিভিন্ন স্থানে দেখা যেতে পারে এবং এগুলো সাধারণত নানা বর্ণের ও আকৃতির হতে পারে। আমরা অনেকেই শিশুর রক্তনালির বিকৃতিকে জন্মদাগ বলে ভুল করে থাকি। অল্প কিছু ত্বকের বর্ণ বা রঙের ভিন্নতা ছাড়া, যেমন আঁচিল (মেলানোসাইট নেভি) বা তিল ইত্যাদি এই তথাকথিত জন্মদাগগুলোর বেশির ভাগই আসলে মাতৃগর্ভে থাকাকালীন শিশুর রক্তনালি (শিরা, ধমনি, ক্যাপিলারি) বা লসিকানালির গঠনের সময়ের ত্রুটি। রক্তনালির বিকৃতিগুলো গোলাপি বা গাঢ় লাল (হিমাঞ্জিওমা এবং ধমনি বা ক্যাপিলারির ত্রুটি), অথবা নীল (শিরার ত্রুটি) রঙের হতে পারে। পক্ষান্তরে লসিকানালির ত্রুটিগুলো সাধারণত বর্ণহীন হয়। কিছু বিকৃতি মসৃণ হয়ে ত্বকের সঙ্গে মিশে থাকে, আবার কিছু অমসৃণ হয়ে ত্বকের ওপর উঁচু হয়ে ফুলেও থাকতে পারে। এগুলো শরীরের যেকোনো স্থানে যেমন—মুখমণ্ডল, গলা, কাঁধ, হাত, পা, বুক অথবা পিঠে হতে পারে। আবার কিছু বিকৃতি বাইরে থেকে দেখা যায় না, যেগুলো শরীরের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন মস্তিষ্ক, যকৃৎ, ফুসফুস, পরিপাকতন্ত্র, শ্বাসনালি, চোখ ও নাকের ভেতর হয়। কিছু রক্তনালির বিকৃতি, যেমন—ইনফ্যানটাইল হিমাঞ্জিওমা ও এক প্রকারের জন্মগত হিমাঞ্জিওমা শিশুর বয়স ছয় থেকে আট বছর হওয়ার ভেতর মিলিয়ে যায় অথবা ত্বকের ওপর সামান্য দাগ বা পুরোনো ক্ষতচিহ্নের মতো রয়ে যায়। আবার কিছু রক্তনালির বিকৃতির পরবর্তী সময় সামাজিক সমস্যা (যেমন বিয়ে, চাকরি) অথবা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা (যেমন দৃষ্টিহীনতা, হাত বা পা অকেজো হয়ে যাওয়া) থেকে জীবন বিপন্নকারী অসুস্থতা যেমন—রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া, নাক-মুখ দিয়ে রক্তপাত, হূদযন্ত্রের গোলযোগ (হার্ট ফেইলিওর), হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড গ্রন্থির অসুখ), এমনকি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) পর্যন্ত ঘটতে পারে।

আমাদের দেশের অনেক মা-বাবাই জানেন না যে তথাকথিত ‘জন্মদাগ’, যা কি না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রক্ত বা লসিকানালির বিকৃতি একটি চিকিৎসাযোগ্য ব্যাধি এবং বিনা চিকিৎসা বা দেরিতে চিকিৎসায় শিশুদের ভয়াবহ শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। অন্যদিকে, দুর্ভাজ্যজনক হলেও সত্য যে বর্তমানে আমাদের দেশে এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের যথাযথ চিকিৎসার জন্য কোনো কেন্দ্র বা হাসপাতাল নেই। সেই সঙ্গে রয়েছে সঠিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকেরও প্রচণ্ড অভাব। অনেক চিকিৎসকই হিমাঞ্জিওমা এবং শিরা বা ক্যাপিলারির ত্রুটির ভেতর পার্থক্য নির্ণয় না করে সব রক্তনালির বিকৃতিকেই হিমাঞ্জিওমা নামে অভিহিত করছেন। সব মিলিয়ে এই রোগীরা বর্তমানে সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, উপরন্তু প্রায়ই ভুল চিকিৎসার ফলে শারীরিক ও মানসিক জটিলতার শিকার হয়ে পারিবারিক এবং সামাজিক বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

এসব শিশুর সঠিক রোগ নির্ণয় ও যথাযথ চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু হাসপাতালের সহযোগিতায় সম্প্রতি ঢাকার মোহাম্মদপুরের কেয়ার হাসপাতালে একটি ভাস্কুলার অ্যানোম্যালিজ চিকিৎসা ও গবেষণাকেন্দ্র (ভিএটিআরসি) স্থাপন করা হয়েছে। এই অলাভজনক ভিএটিআরসি চিকিৎসাকেন্দ্রটি রক্তনালির বিকৃতিজনিত রোগীদের সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার পাশাপাশি দেশের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করছে।

দেশের চিকিৎসকদের সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতিতে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে ভিএটিআরসি হার্ভার্ডের সহায়তায় ভাস্কুলার অ্যানোমেলিজ ইন চিল্ড্রেন নামে একটি বইও প্রকাশ করেছে। বইটি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরি এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের লাইব্রেরির পাশাপাশি ঢাকার নিউমার্কেটে ও যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেলে পাওয়া যাচ্ছে। এতে খুব সহজ ভাষায় রোগের উপসর্গ থেকে রোগ নির্ণয় এবং আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে এমনভাবে শেখানো হয়েছে যে চিকিৎসকেরা ছাড়াও রোগীর মা-বাবারাও উপকৃত হবেন। সর্বোপরি চিকিৎসক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ভিএটিআরসি রক্তনালির বিকৃতিজনিত রোগের ব্যাপারে দেশব্যাপী জনসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। আসুন, আমরা শিশুদের সহজ চিকিৎসাযোগ্য ব্যাধিটি নির্মূলের উদ্দেশ্যে সম্মিলিত প্রয়াস নিই, যার প্রথম পদক্ষেপ হবে এই রোগ সম্বন্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক তৈরি করা।

রুহুল আবিদ
অধ্যাপক, হার্ভার্ড মেডিকেল কলেজ, বোস্টন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভাস্কুলার অ্যানামেলিজ চিকিৎসা ও গবেষণাকেন্দ্র,
কেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৩, ২০১১
[/size]