Daffodil Computers Ltd.
E-Health / Protect Your Health => For All / Others => Topic started by: bbasujon on January 13, 2012, 06:09:17 PM
-
মাথা ঘোরানো মানুষের এক বিশেষ ধরনের অনুভূতি। কেউ কেউ নিজেই ঘুরছেন বলে অনুভব করেন। আবার অনেকে তাঁর চারপাশে ঘুরছে বলে অনুভব করেন। কারণ হিসেবে অন্তকর্ণের অসুবিধা অথবা ৮ নং (ভেস্টিবুলা ককলিয়ার) নার্ভের অসুবিধার জন্য হতে পারে। উচ্চরক্তচাপের জন্য মাথা ঘুরতে পারে। এসব রোগীর অনেক সময় কানের মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে টিন টিন বা শোঁ শোঁ শব্দ হতে পারে। কখনো কখনো কানে কম শুনে থাকেন। এ ছাড়া ব্রেনের পেছনে রক্ত সরবরাহের ত্রুটি ও ঘাড়ের রক্তনালিতে ব্লকের কারণে মাথা ঘোরাতে পারে। কোনো কোনো রোগীর রক্তে লবণের তারতম্যের (ইলেকট্রলাইট ইমব্যালেন্স) জন্য এমনটা হতে পারে।
বাইরের থেকে শোনা শব্দ মানুষের কানের ভেতর গিয়ে কক্লিয়া নামক ব্যবস্থার মাধ্যমে শব্দশক্তি বিদ্যুৎশক্তিতে পরিণত হয়। এ রূপান্তরিত বিদ্যুৎশক্তি অন্তকর্ণের থেকে ৮ নং নার্ভের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে ব্রেনের টেম্পোরাল লোবকে উত্তেজিত করে। তখনই মানুষ শব্দের অর্থ অনুধাবন করতে পারে। পাশাপাশি মানুষের ভারসাম্যের জন্য অন্তকর্ণে ভেস্টিবুলার যন্ত্র থাকে। এ যন্ত্র থেকে ভারসাম্যের তথ্য মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। একই সঙ্গে চোখে দেখা, হাত-পায়ের স্পর্শ অনুভূতি থেকে প্রাপ্ত তথ্য মস্তিষ্ক মিলিয়ে দেখে। মেলানো তথ্যের ওপর ভিত্তি করে শারীরিক অবস্থানকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যাবতীয় নির্দেশের মাধ্যমে শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রতি সেকেন্ডে, প্রতি মুহূর্তে এ এক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার খেলা।
কানের ভেতর হওয়া অস্বাভাবিক টিন টিন, শোঁ শোঁ বা দপ দপ শব্দ সার্বক্ষণিক হতে পারে, আবার মাঝেমধ্যেও হতে পারে। এক কানেও হতে পারে, আবার দুই কানেও হতে পারে। আস্তেও হতে পারে, আবার জোরেও হতে পারে। একসঙ্গে যখন একই কানে কম শোনা ও জোরালো শব্দ হয়ে থাকে, তখন নার্ভের সমস্যা মনে হয়। কিন্তু মেনিয়ার্স ডিজিজ নামক রোগে অল্পমাত্রায় শব্দ হয়ে থাকে। আর দপ দপ করে শব্দ হলে রক্তনালির সমস্যা আছে বলে মনে করা হয়। মাথায় আঘাতে পেট্রাস বোন ক্ষতিগ্রস্ত হলে অথবা জোরে ঝাঁকুনি লাগার ফলে অন্তকর্ণ বা ব্রেনের ক্ষতি হওয়ার ফলে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি মাথা ঘোরানোর সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু কিছু মাথা ঘোরানো অল্প সময়ের জন্য হয়, মাথার অবস্থার পরিবর্তনের জন্য কমে-বাড়ে, আবার নিজে নিজে কমে যায়। একে বিনাইন পজিশনাল ভার্টাইগো বলা হয়। মেনিয়ার্স রোগে সাধারণত মধ্যবয়সী লোকেরা আক্রান্ত হয়ে থাকেন। মাঝেমধ্যে প্রচণ্ড মাথা ঘোরানো ও এক কানে কম শোনার অসুবিধা হয়ে থাকে। কিছু কিছু ওষুধ যেমন স্টেপটোনাইসন ও কুইনাইন প্রভৃতির জন্য মাথা ঘুরতে পারে। ভাইরাল ইনফেকশনের জন্য ভেস্টিবুলার নিউরাইটিস নামক সমস্যা থেকে হঠাৎ মাথা ঘোরানো দেখা দিয়ে ধীরে ধীরে কমে যায়।
মস্তিষ্কে টিউমারও মাথা ঘোরানোর কারণ হতে পারে। ব্রেইন স্টেমে পানি জমে সিরিঙ্গ বাল্বিয়া নামক রোগ হলে মাথা ঘোরানো দেখা দিতে পারে। মাথা ঘোরানোর জন্য কান ও চোখের পরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে ব্রেইন সিটিস্ক্যান বা এমআরআই ও কানের পিটিএ পরীক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া ঘাড়ের রক্তনালির ডুপ্লেক্স পরীক্ষা বেশ কার্যকর।
মাল্টিপল স্কেরোসিস নামক রোগ ব্রেইন স্টেমে দেখা দিতে পারে। ভার্টাইগো চিকিৎসার জন্য ইপলে মনোভার নামক ব্যায়াম বেশ কার্যকর।
বিশেষ করে বিনাইন পজিশনাল ভার্টাইগোর জন্য খুবই কার্যকর। ইপলে মেনুভারের মাধ্যমে আক্রান্ত ভেস্টিবুলার অ্যাপারেটাসে জমে থাকা অপ্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম সরে যায়, ফলে ধীরে ধীরে ভার্টাইগো কমে যায়। মারাত্মক ভার্টাইগোর ক্ষেত্রে অ্যান্টি-কোলিনার্জিক, অ্যান্টি-হিসটামিন ওষুধের প্রয়োজন। জটিল ক্ষেত্রে অপারেশনেরও প্রয়োজন হতে পারে। যাঁদের দীর্ঘ সময় অফিসের কাজ করলে মাথা ঘোরায়, তাঁদের জন্য ডিজি ফিক্স নামক একধরনের চেয়ার আছে। বিজ্ঞানসম্মতভাবে খুব দ্রুত এই চেয়ারের পজিশন পরিবর্তন করা সম্ভব।
সুদিপ্ত কুমার মুখার্জী
নিউরো সার্জন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০৮, ২০১১