Author Topic: চাপ হলো হরমোনের খেলা  (Read 3751 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
চাপ হলো হরমোনের খেলা
« on: January 16, 2012, 07:59:04 PM »
চাপ তো জীবনে থাকবেই। চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি না হলে জীবনটা কেমন সবজির মতো হয়ে যায় না? তবে বেশি চাপ হলে, অনবরত চাপ থাকলে, চাপের শেষে চাপহীন স্বস্তির কাল না থাকলে সুস্থ থাকবে না জীবন। চাপ হলে জীবনে প্রাণরসের যে খেলা চলে তা বড়ই আশ্চর্য ব্যাপার। চাপকে বলি স্ট্রেস, আর স্ট্রেস হলে হরমোন তো নিঃসৃত হয়ই। শরীরে দুটো কিডনির মাথার ওপর মুকুটের মধ্যে বসে আছে যে দুটো অন্তঃস্রাবী গ্রন্থি, এদের নাম ‘এড্রিনাল’। এই এড্রিনাল থেকে নিঃসৃত হয় স্ট্রেস হরমোন-‘কর্টিসোল’। চাপের সময় জীবনে আসে যে সংকট, সে সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে আসে কর্টিসোল। হঠাৎ সংকটে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং দেহপ্রতিরোধ শক্তিকে মজবুত রাখতে সাহায্য করে কর্টিসোল। শারীরিক বা মানসিক চাপ-যে ধরনের চাপই হোক, কর্টিসোল হরমোনের প্রভাবে দেহের শক্তির ভাণ্ডার হয় অবমুক্ত, সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতাও যায় বেড়ে।
সমস্যা হলো, স্ট্রেস যদি হয় বিরামহীন, তাহলে জীবন রক্ষার এ ব্যবস্থাটি থেকে যায় তুঙ্গে। তাই হরমোনের শুভ প্রভাবগুলো তখন সুফল ফেলে না শরীরের ওপর। আর জীবনে চাপের বিরাম না থাকলে, কর্টিসোল হরমোনও ক্রনিক উঁচু মান নিয়ে থাকে শরীরে, তখন হয় অনিদ্রা, রোগপ্রতিরোধ শক্তি দুর্বল হয়ে আসে, রক্তের সুগারের মান হয় অস্বাভাবিক, কখনো ওজনও বাড়ে শরীরে। পেটে জমে মেদ। কর্টিসোল যখন তুঙ্গে থাকে, তখন শরীরকে এটি সংকেত পাঠায় হাইক্যালোরি খাবার খেতে। বিপদের অকুস্থল থেকে পালানোর জন্য, দেহে শক্তি সঞ্চারের জন্য এ ব্যবস্থা। বিপদে শরীরের এ সুরক্ষণ ব্যবস্থাকে বলে ‘লড়ো
বা পালিয়ে যাও’ ব্যবস্থা। সৌজন্যবশত শরীরে এই ‘লড়ো বা পালিয়ে যাও’ ব্যবস্থার প্রতিষেধকও রয়েছে-শিথিলায়ন। কর্টিসোল হরমোন মান হ্রাসের জন্য কিছু রয়েছে টিপস।

কর্টিসোল নামিয়ে আনুন ২০ শতাংশ
যাঁরা ধ্যান চর্চা করেন, তাঁদের কর্টিসোল মান ও রক্তচাপ নামে। মহাঋষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা চার মাস ক্রমাগত ধ্যান করেছেন, এঁদের কর্টিসোল মান কমেছে ২০ শতাংশ। প্রাণায়াম, ধ্যান, উপাসনা চাপ প্রশমনে খুব কাজ দেয়।

কর্টিসোল মান উঁচুতে ওঠা অনেক কমায়
বড় কোনো চাপের মুখোমুখি যখন, সংগীত মস্তিষ্কের ওপর তখন প্রশান্তির প্রভাব ফেলে। কোনো চাপের কাজের সময় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হলে, এমনকি ঘুমাতে যাওয়ার আগে টিভি না দেখে লো ভলিউমে প্রিয় সংগীত শুনলে মন অনেকটা চাপমুক্ত হবে।

হ্রাস করুন কর্টিসোল ৫০ শতাংশ
আট ঘণ্টা রাতে না ঘুমিয়ে ছয় ঘণ্টা ঘুমালে কী হবে? ট্যালবট বলেন, রক্তস্রোতে ৫০ শতাংশ বেশি থাকবে কর্টিসোল। জার্মানির ইনস্টিটিউট অব এরোস্পেস মেডিসিনের একটি গবেষণায় দেখা গেল, একদল পাইলট, যাঁরা সাত রাত ছয় ঘণ্টা বা এরও কম সময় রাতে ঘুমালেন কর্মস্থলে, এঁদের কর্টিসোল মান তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেড়ে গেল এবং বেড়ে থাকল দুই দিন। তাই আট ঘণ্টা চোখ বুজে নিদ্রা গেলে শরীর দিনের চাপ সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় পায়-বলেন পুষ্টিবিজ্ঞানী শন ট্যালবট। তাই কোনো দিন আট ঘণ্টার কম ঘুমালে পরদিন দিবানিদ্রা নেওয়া ভালো।

হ্রাস করুন কর্টিসোল ৪৭ শতাংশ
কালো চা (ব্ল্যাক টি) পানে চাপ কমে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের কিছু লোককে দেওয়া হলো কঠোর কাজ। এঁদের মধ্যে যাঁরা ব্ল্যাক টি পান করেন, অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে কর্টিসোল মান কমে এল ৪৭ শতাংশ; যাঁরা এমনি চা পান করেন, তাঁদের কর্টিসোল কমল ২৭ শতাংশ।

হ্রাস করুন কর্টিসোল ৩৯ শতাংশ
প্রাণের বন্ধুর কৌতুক পরিহার কর্টিসোল মান নামাতে পারে। এমনকি হাসির কথা ভাবলেও কমে আসে কর্টিসোল মান।

কর্টিসোল কমে ৩১
ইউনিভার্সিটি অব মিয়ামি স্কুল অব মেডিসিনের গবেষণায় দেখা গেছে, কয়েক সপ্তাহ গা-হাত-পা ম্যাসাজ করলে কর্টিসোল মান কমে এক-তৃতীয়াংশ। এ ছাড়া মালিশের ফলে আনন্দ আনয়নকারী হরমোন ডোপামিন ও সেবোটনিনও উৎসারিত হয়, এতেও কমে চাপ।

কর্টিসোল হ্রাস করুন ২৫ শতাংশ
আত্মিক উন্নতি, ধর্মীয় রীতিনীতিচর্চা কবলে দিনগত চাপ অনেক কমে। হ্রাস পায় কর্টিসোল মান-বলেন মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। এমনকি উদ্যান ভ্রমণ, অরণ্যে ভ্রমণ, সাগরসৈকতে হাঁটাও কর্টিসোল মান কমায়।

কর্টিসোল হ্রাস করুন ১২-১৬ শতাংশ
চিবাতে পারেন বাবলগাম, কমবে চাপা। কেউ পান চিপিয়ে চাপ কমান। ১২ শতাংশ কর্টিসোল কমে।

চাপের ভালো দিক
কিছু চাপ বা স্ট্রেস, কিছু কর্টিসোলের প্রয়োজনও আছে। ক্রনিক ফ্যাটিক সিনড্রোম ও ফাইব্রোমায়ালজিয়ায় রয়েছে এর ব্যবহার। বাড়ায় স্মৃতিশক্তি।

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, পরীক্ষাগার সেবা, বারডেম হাসপাতাল
সাম্মানিক অধ্যাপক
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৫, ২০০৯
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection