Daffodil Computers Ltd.

E-Health / Protect Your Health => E- Health For Women => Topic started by: bbasujon on January 12, 2012, 09:20:09 PM

Title: হট ফ্ল্যাশ : প্রশান্তির সন্ধানে
Post by: bbasujon on January 12, 2012, 09:20:09 PM
পৃথিবীজুড়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মানুষের আয়ু। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। প্রায় ১৬ কোটিতে পৌঁছেছে এই ঘনবসতিপূর্ণ দেশটির লোকসংখ্যা। এর প্রায় অর্ধেক হচ্ছেন নারী। এ দেশের নারীর গড় আয়ু হচ্ছে আজ ৬৩ বছর। ১৯৯০ সালে পৃথিবীতে মেনোপজপ্রাপ্ত নারীর সংখ্যা ছিল ৪৬ কোটি ৭ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশের বাস ছিল উন্নত বিশ্বে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়াবে এবং এর ৭৫ শতাংশের বাস হবে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। ফলে এই দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জনসংখ্যা, যার সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই। তাঁদের জীবনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সময় কাটবে মেনোপজে। আমাদের মতো দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সেটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কেননা বর্ধিত জনসংখ্যার সঙ্গে যোগ হবে বয়সী ও অবহেলিত বয়স্ক নারীদের সমস্যা।

আন্তর্জাতিক মেনোপজ সোসাইটি এবং কাউন্সিল অব দি অ্যাফিলিয়েটেড মেনোপজ সোসাইটি কাজ করে যাচ্ছে, যাতে করে বিশ্বব্যাপী এই ক্ষেত্রে সচেতনতা গড়ে তোলা হয়। জীবনযাত্রার উন্নত মান, স্তন ক্যানসারসহ এই বয়সের বিভিন্ন সমস্যাবলি ও হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি সম্পর্কে সব জানা, অজানা কথা ও সন্দেহ নিরসনে গবেষণাভিত্তিক নতুন নতুন তথ্য প্রতিদিন আমাদের উপহার দিচ্ছে তারা।

মেনোপজের সমস্যাবলির মধ্যে প্রধান এবং যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা হচ্ছে ‘হট ফ্ল্যাশ’—এই উপসর্গটিকে প্রতিপাদ্য করে এ বছরের বিশেষ আলোচনার বিষয় হচ্ছে—চাই প্রশান্তি! দেশ, কাল, জাতি, বর্ণ ও সংস্কারভেদে এই অভিজ্ঞতাটির তারতম্য হয়। আমেরিকার নারীদের ৫০-৮০ শতাংশ, দক্ষিণ এশিয়ায় ২০-৬০ শতাংশ, চীন দেশে ৩৫ শতাংশ। আবার জাপানে ১০ শতাংশ পর্যন্ত এবং গড়ে ২৫ শতাংশ নারী এই দুঃসহ যন্ত্রণাটির শিকার। হট ফ্ল্যাশ হচ্ছে ‘হঠা ৎ আলোর ঝলকানির মতো; প্র্রলম্বিত তাপের ঢেউয়ের সঙ্গে রঙের পরিবর্তন।’ হঠা ৎ একটা গরম তাপের ঢেউ খেলে যায় শরীরের উপরিভাগে। কান, মাথা, মুখ ঝা ঝা করে ওঠে, মুখমণ্ডল লাল হয়ে যায়, প্রচুর ঘাম হয়, সঙ্গে থাকে অস্থিরতা। ঘুমের মধ্যে এই হট ফ্ল্যাশ শরীরকে ঘামিয়ে তোলে, ঘুম ভেঙে যায়, বালিশ ভিজে যায়, অবসন্ন বা ক্লান্ত লাগে। বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা এবং দুঃসহ একাকিত্বের সঙ্গে যোগ হয় বিব্রতকর এই মানসিক চাপ। হট ফ্ল্যাশের সঠিক কারণ আজও অজানা। মস্তিষ্কের তাপ নিয়ন্ত্রককেন্দ্র হাইপোথ্যালামাসের সঙ্গে পিটুইটারি বিভিন্ন হরমোন ও নিঃসরণের অসামঞ্জস্য এর কারণ বলে ধরা হয়।

এ ছাড়া শরীরের অভ্যন্তরীণ ওপিয়ড ও অ্যামাইনগুলোও কিছুটা দায়ী। তবে যা-ই হোক না কেন, এটি স্বতঃসিদ্ধভাবে প্রমাণিত যে ইস্ট্রোজেন হরমোন এই ‘হট ফ্ল্যাশ’কে সম্পূর্ণ দূর করতে সক্ষম। এটির কারণ ও চিকি ৎসা প্রসঙ্গে খুবই চমকপ্রদ ইতিহাস আছে। প্রাচীনকালে জোঁক দিয়ে বা রক্তনালি (শিরা) কেটে রক্ত নিঃসরণের মাধ্যমে এই হট ফ্ল্যাশের চিকি ৎসা করা হতো। ঘুমের ওষুধ, ঠান্ডা পানির গোসল বা সেঁকও অনুমোদন করা হতো।
ফরাসি বিজ্ঞানী ব্রাউন সিকোয়ার্ড আবিষ্কার করেন যে ফ্ল্যাশ প্রকৃতপক্ষে ডিম্বাশয়ের অকার্যকরতার জন্য ঘটে থাকে। প্রতিকার হিসেবে মেষের ডিম্বাশয়ের স্যান্ডউইচ তিনি অনুমোদন করেন।

প্রতিরোধ ও প্রতিকার
হরমোন (ইস্ট্রোজেন) চিকি ৎসাই হট ফ্ল্যাশের সর্বোত্তম চিকি ৎসা। নানা গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটি এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুল প্রচারিত ও গৃহীত। শতকরা ৯০ ভাগ নারী এই চিকি ৎসার মাধ্যমে তিন মাসের মধ্যে এমন দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
কিছু রোগী (যেমন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত) এই চিকি ৎসা নিতে পারেন না। তাঁদের জন্য বিকল্প চিকি ৎসা হিসেবে নানা পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। ফাইটোইসট্রোজেনসমৃদ্ধ খাবারদাবার, ক্যাপসুল, হার্বাল, আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথি থেকে শুরু করে যোগব্যায়াম, রেইকি, আকুপাংচার, সাইকোথেরাপি পর্যন্ত বিভিন্ন পদ্ধতির উল্লেখ ও ব্যবহার আছে। তবে এসব বিকল্প চিকি ৎসার নিরাপদ ও নিশ্চিত সুফল পেতে হলে আরও বিশদ গবেষণা হওয়া দরকার।
মাইগ্রেন ও উচ্চরক্তচাপের চিকি ৎসা এবং প্রতিরোধে ব্যবহূত ওষুধ ক্লোনিডিন অনেক সময় যেসব রোগীর হরমোন নেওয়া বারণ, তাঁদের বেলায় দেওয়া হয়। সম্প্রতি কিছু সেরোটনিন ইনহিবিটর এবং মৃগী রোগীর চিকি ৎসায় ব্যবহূত গাবাপেনটিন হট ফ্ল্যাশ দূর করতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
৫০ বছর বয়সে একজন সফল নারী যখন পেশাজীবনের শীর্ষে, তখন হট ফ্ল্যাশের মতো যন্ত্রণাদায়ক ভোগান্তি তাঁর আত্মবিশ্বাস ও কর্মক্ষমতা নষ্ট করে তাঁকে বিধ্বস্ত করে দিতে পারে। এটি যেহেতু ধীরে ধীরে নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায় এবং মারাত্মক কোনো ব্যাধি নয়, তাই হয়তো এ নিয়ে যথেষ্ট গবেষণামূলক কাজ আজও হয়নি। এর সুচিকি ৎসার জন্য আমাদের এই যন্ত্রণাদায়ক সূচকটির কারণ খুঁজে বের করা অবশ্যই প্রয়োজন। তা না হলে মেনোপজের এই অত্যাশ্চর্য উপসর্গটি আরও বহুদিন পর্যন্ত রহস্যাবৃতই থেকে যাবে।

সুরাইয়া রহমান
বিশেষজ্ঞ চিকি ৎসক ও মহাসচিব বাংলাদেশ মেনোপজ সোসাইটি
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ২৩, ২০১১