General Category > Law of Bangladesh

শ্রম সংক্রান্ত আইন ও বিধি

(1/4) > >>

bbasujon:
কল-কারখানা আইন, ১৯৬৫
(The Factories Act. 1965)
[১৯৬৫ সালে ৪নং আইন]

[১৯৩৪ সালের কারখানা আইন (১৯৩৪ সালের ২৫নং আইন) বাতিল করে কিছু সংশোধনীসহ আবারো প্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রণীত আইন]

প্রথম অধ্যায়
প্রাথমিক বিষয়াদি

ধারা-১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, আওতা ও আরম্ভ :

এই আইন কল-কারখানা আইন, ১৯৬৫, নামে অভিহিত হইবে।

সমগ্র বাংলাদেশ এই আইনের আওতাভুক্ত।

ইহা অবিলম্বে বলবত হইবে।

ধারা-২। সংজ্ঞাসমূহ :

বিষয়বস্তু বা প্রসঙ্গের সহিত সঙ্গতিহীন না হইলে এই আইনে-

(ক) ‘কিশোর-কিশোরী’ বলিতে এমন ব্যক্তিকে বুঝাইবে, যাহার বয়স ষোল বত্সর পূর্ণ হইয়াছে, কিন্তু আঠারো বত্সর হয় নাই।

(খ) ‘সাবালক’ বলিতে এমন ব্যক্তিকে বুঝাইবে, যাহার বয়স আঠারো বত্সর পূর্ণ হইয়াছে।

(গ) ‘শিশু’ বলিতে এমন ব্যক্তিকে বুঝাইবে, যাহার বয়স ষোল বত্সর পূর্ণ হয় নাই।

(ঘ) ‘দিন’ বলিতে মধ্যরাত্রি হইতে শুরু করিয়া চব্বিশ ঘন্টা সময় বুঝাইবে।

(ঙ) ‘বিষ্ফোরক দ্রব্য’ বলিতে বিষ্ফোরক দ্রব্য প্রস্তুত করার উপাদানও বুঝাইবে।

(চ) ‘কল-কারখানা’ বলিতে সীমানাসহ এমন একটি ভবন বুঝাইবে, যেখানে দশ বা ততোধিক শ্রমিক কাজ করিতেছে বা পূর্ববর্তী বারো মাসের মধ্যে কোনো দিন কাজ করিতেছিল এবং যেখানে বৈদ্যুতিক শক্তির সাহায্যে বা তাহা ব্যতীত কোনো উত্পাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হইতেছে; কিন্তু ইহা দ্বারা ১৯২৩ সালের খনি আইনের (১৯২৩ সালের ৪নং আইন) আওতাধীন কোনো খনি বুঝাইবে না।

কোনো ভবন একটি কারখানা হইতে হইলে সেখানে অবিরামভাবে শ্রমিকগণ কাজ করিতে থাকিবে, এইরূপ হওয়ার প্রয়োজন নাই। কেবলমাত্র যদি পূর্ববর্তী বারো মাসের মধ্যে কোনো একদিন সেখানে দশজন শ্রমিক  কার্যে  র্র্নিযুক্ত হইয়া থাকে, তাহাই যথেষ্ট, তত্পর যদি শ্রমিকদের সংখ্যা হ্রাসপ্রাপ্তও হইয়া থাকে, তথাপি ঐদিন  হইতে পরবর্তী বারো মাস  পর্যন্ত সেই ভবনটি কারখানা বলিয়া গণ্য হইবে।

(ছ) ‘যন্ত্রপাতি’ বলিতে প্রধান চালিকা যন্ত্র, সঞ্চালনকারী যন্ত্র এবং বিদ্যুত্ উত্পাদন, রূপান্তর, সঞ্চালন ও প্রয়োগের জন্য ব্যবহৃত অন্যান্য কলকব্জাকেও বোঝায়।

(জ) ‘উত্পাদন প্রক্রিয়া’ বলিতে বোঝায়-

(১)  কোনো বস্তু ব্যবহার, বিক্রয়, পরিবহন, অর্পন, প্রদর্শন বা বিহিত ব্যবস্থা করার জন্য উহার প্রস্তুত, রূপান্তর, মেরামত, অঙ্গ-সজ্জা করা,  উহাতে রং করা, ধৌত করা, শেষ স্পর্শ দেওয়া বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহারোপযোগী করার প্রক্রিয়া, অথবা

(২)     তৈল, গ্যাস, পানি, নর্দমার ময়লা বা অন্য কোনো তরল পদার্থ বা ময়লা পাম্প করার প্রক্রিয়া; অথবা

(৩)     বিদ্যুত্ কিংবা গ্যাস উত্পাদন, রূপান্তর  বা সঞ্চালন করিবার প্রক্রিয়া, অথবা

(৪)     জাহাজ বা নৌযান নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ, মেরামত, সংস্কার, নির্মাণ কার্যের শেষ স্পর্শ দান বা ভাঙ্গিয়া ফেলার প্রক্রিয়া; অথবা

(৫) মুদ্রণ যন্ত্র, লিথোগ্রাফি, ফটোগ্রাফার দ্বারা বা অনুরূপ কোনো উপায়ে কিছু ছাপাইবার অথবা স্বতন্ত্র ব্যবসা হিসাবে বা মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে বা অন্য কোনো ব্যবসার আনুষাঙ্গিক কার্য হিসাবে পুস্তক বাঁধাই করার প্রক্রিয়া।

(ঝ) কারখানা প্রসঙ্গে দখলকারী বলিতে এমন ব্যক্তিকে  বোঝায়, কারখানার কাজ-কর্মের উপর যাহার চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ আছে।

তবে শর্ত এই যে, যেই ক্ষেত্রে কারখানা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ম্যানেজিং এজেন্টের উপর ন্যস্ত থাকে, সেই ক্ষেত্রে ম্যানেজিং  এজেন্ট সেই কারখানার দখলকারী বলিয়া গণ্য হইবে।

(ঞ) ‘নির্ধারিত’ বলিতে এই আইন অনুসারে সরকার কর্তৃক প্রণীত বিধিমালা দ্বারা নির্ধারিত বুঝাইবে।

(ট)  ‘প্রধান চালিকা যন্ত্র’ বলিতে কোনো ইঞ্জিন, মোটর অথবা বিদ্যুত্ উত্পাদন  বা সরবরাহকারী অন্য কোনো কলকব্জা বুঝাইবে।

(ঠ) ‘রীলে’ বলিতে যে ক্ষেত্রে একই ধরনের কাজ দিনের বিভিন্ন সময় দুই বা ততোধিক দলবদ্ধ শ্রমিক কর্তৃক সম্পন্ন হয়, তাহার প্রত্যেক সময় বুঝাইবে।

(ড) ‘শিফ্ট’ বলিতে যে ক্ষেত্রে একই ধরনের কাজ দিনের বিভিন্ন সময় দুই বা ততোধিক দলবদ্ধ শ্রমিক কর্তৃক সম্পন্ন হয়, তাহার প্রত্যেক সময় বুঝাইবে।

(ঢ) ‘সঞ্চালন যন্ত্র’ বলিতে কোনো শ্যাফ্ট হুইল, ড্রাম-পুলী, পুলী-ব্যবস্থা, কাপলিং ক্লাচ, ড্রাইভিং বেল্ট বা অন্য যেই কলকব্জার সাহায্যে প্রধান চালিকার গতি অন্য কোনো যন্ত্রে সঞ্চারিত বা গৃহীত হয়, তাহা বুঝাইবে।

(ণ) ‘সপ্তাহ’ বলিতে নির্দিষ্ট সাপ্তাহিক ছুটির দিনের পূর্ববর্তী মধ্যরাত্রি হইতে আরম্ভ করিয়া সাত দিন সময় বুঝাইবে।

(ত) ‘শ্রমিক’ বলিতে এমন ব্যক্তিকে বুঝাইবে, যেই ব্যক্তি বেতনসহ বা বিনা বেতনে কোনো উত্পাদন প্রক্রিয়ার কাজে, অথবা উত্পাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহার্য যন্ত্রপাতি বা ভবন পরিষ্কার কাজে, অথবা উত্পাদন প্রক্রিয়ার সহিত সংশ্লিষ্ট বা উত্পাদন প্রক্রিয়ার আনুষঙ্গিক কাজে সরাসরিভাবে বা এজেন্সীর মাধ্যমে নিযুক্ত হয়; কিন্তু যেই কক্ষে বা স্থানে কোনো উত্পাদন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় না, সেখানে সম্পূর্ণরূপে কেরাণীর পদে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে বুঝাইবে না।

 (থ) ‘তরুণ ব্যক্তি’ বলিতে এমন ব্যক্তিকে বুঝাইবে, যেই ব্যক্তি একজন শিশু বা নব যুবক বা যুবতী।

 (দ) ‘শক্তি’ বলিতে এইরূপ বৈদ্যুতিক শক্তি বা অন্যবিধ শক্তি বুঝাইবে, যাহা যান্ত্রিক উপায়ে সঞ্চালিত হয় এবং যাহা মানবিক বা পাশবিক শ্রমের দ্বারা উত্পন্ন  হয় নাই।

(ধ)  ‘মজুরী’ বলিতে ১ঌ৩৬ সালের মজুরী পরিশোধ আইনে (১ঌ৩৬ সালের ৪ নং আইন) বর্র্ণিত মজুরী বুঝাইবে।

ধারা-৩। কতিপয় স্থানে এই আইনের বিধানসমূহ প্রয়োগের ক্ষমতা :

(১)   সরকারী গেজেটে বিজ্ঞপ্তি প্রচারের দ্বারা সরকার ঘোষণা করিতে পারেন যে, যেই স্থানে বিদ্যুত শক্তি ব্যবহার করিয়া বা তাহা না করিয়া উত্‌পাদন প্রক্রিয়া পরিচালিত হইতেছে বা সাধারণত হইয়া থাকে, এবং সেইখানে পাঁচজন  বা ততোধিক শ্রমিক কাজ করিতেছে বা পূর্ববর্তী বারো মাসের মধ্যে কোনো দিন কাজ করিয়াছে, সেই স্থানে এই আইনের বিধানসমূহ প্রযোজ্য হইবে।

(২)   উপধারা (১) অনুসারে কোনো বিজ্ঞপ্তি একটি স্থান সম্পর্কে বা অনুরূপ শ্রেণীর কোন স্থানসমূহ সম্পর্কে অথবা সাধারণভাবে অনুরূপ সকল স্থান সম্পর্কে প্রচার করা যাইতে পারে।

২ ধারার (চ)  অনুচ্ছেদে যাহাই থাকুক না কেন, যেই স্থানে এই আইনের সকল বা কোনো কোনো বিধান (১) উপধারার ঘোষণা অনুসারে বর্তমানে প্রযোজ্য, সেই স্থান কেবল এই আইনের বিধান প্রয়োগ সাপেক্ষে কারখানা বলিয়া বিবেচিত হইবে, অন্যথায় নয়।

ধারা-৪। বিভিন্ন বিভাগকে স্বতন্ত্র কারখানা বলিয়া ঘোষণা করার ক্ষমতা :

সরকার লিখিত আদেশ দ্বারা নির্দেশ দিতে পারেন যে, নির্দিষ্ট কোনো কারখানার বিভিন্ন বিভাগ বা শাখাসমূহ এই আইনের সকল বা কোনো কোনো উদ্দেশ্যে এক কারখানা বলিয়া বিবেচিত হইবে।

bbasujon:
ধারা-৫। অব্যাহতি দানের ক্ষমতা :

সরকারী গেজেটে বিজ্ঞিপ্তি প্রচার করিয়া সরকার কোনো কারখানাকে বা কোনো শ্রেণী বা বিবরণভুক্ত কারখানাসমূহকে এই আইনের সকল বা কোনো বিধানের আওতা হইতে জনস্বার্থের খাতিরে উপযুক্ত বলিয়া বিবেচিত সময়ের জন্য অব্যহতি দিতে পারিবেন।

তবে, শর্ত এই যে, একযোগে ছয় মাসের অধিক সময়ের জন্য অনুরূপ অব্যাহতি দান করা যাইবে না।

ধারা-৬। কাজ আরম্ভের পূর্বে ইন্সপেক্টরকে নোটিশ দান:

(১)  কোনো দখলকারী কোনো ভবনকে কারখানা হিসাবে ব্যবহার করিতে চাহিলে, তদ্রুপ ব্যবহার আরম্ভ করিবার কমপক্ষে পনেরো দিন পূর্বে চীফ ইন্সপেক্টার নিকট নিম্নলিখিত বিবরণ সম্বলিত একটি লিখিত নোটিশ পাঠাইতে হইবে-

(ক) কারখানার নাম ও অবস্থান;

(খ) দখলকারীর নাম ও ঠিকানা;

(গ) কারখানা সম্পর্কিত চিঠিপত্র প্রেরণের ঠিকানা;

(ঘ) উত্পাদন প্রক্রিয়ার ধরন-

(১)  এই আইন বলবত হইবার তারিখে যেই সকল কারখানা বিদ্যমান ছিল, সেইগুলির ক্ষেত্রে বিগত বারো মাসের উত্পাদন প্রক্রিয়ার ধরন;

       (২)  সকল কারখানার ক্ষেত্রে আগামী বারো মাসের উত্পাদন প্রক্রিয়ার ধরন;

(ঙ) কারখানায় ব্যবহার্য শক্তির পরিমাণ ও ধরন;

(চ) এই আইনের উদ্দেশ্যে কারখানার ম্যানেজারের নাম;

(ছ) কারখানায় শ্রমিক নিয়োগের সম্ভাব্য  সংখ্যা;

(জ) এই আইন বলবত হওয়ার তারিখে যেই সকল কারখানা বিদ্যমান ছিল, সেইগুলির ক্ষেত্রে বিগত বারো মাসে নিযুক্ত শ্রমিরদের দৈনিক গড়পড়তা সংখ্যা; এবং

(ঝ) অন্যান্য  যেই সকল বিবরণ চাওয়া হইতে পারে।

(২) কোনো কারখানা যখন প্রথম এই আইনের আওতাভুক্ত হইবে, তখন সেই সকল কারখানার দখলকারীগণ এই আইন বলবত হইবার ত্রিশ দিনের মধ্যে (১) উপধারায় উল্লিখিত বিবরণ সম্বলিত লিখিত নোটিশ চীফ ইন্সপেক্টরের নিকট প্রেরণ করিবে।

(৩) যেই সকল কারখানায় বত্সরে একশত আশি কার্যদিবসের কম সময় উত্পাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়, সেই সকল কারখানায় পুনরায় কাজ আরম্ভ হইবার পূর্বে উহার দখলকারী কাজ আরম্ভ হইবার পূর্ববর্তী ত্রিশ দিনের মধ্যে (১) উপধারায় উল্লিখিত বিবরণ সম্বলিত একটি লিখিত নোটিস চীফ ইন্সপেক্টরের নিকট প্রেরণ করিবে।

(৪) অন্য ব্যক্তি কারখানার ম্যানেজার নিযুক্ত হইলে, দখলকারী নূতন ম্যানেজার কার্যভার গ্রহণ করিবার তারিখ হইতে সাত দিনের মধ্যে এই পরিবর্তন সম্পর্কে একটি লিখিত নোটিস চীফ ইন্সপেক্টরের নিকট প্রেরণ করিবে।

(৫) যেই সময় কারখানার ম্যানেজার পদে কেহই নিযুক্ত থাকে না, অথবা ম্যানেজার পদে নিযুক্ত ব্যক্তি যেই সময় কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করে না, সেই সময় যেই ব্যক্তি ম্যানেজার হিসাবে কাজ চালায়, সেই ব্যক্তি এবং যেই ক্ষেত্রে কেহই তদ্রুপ কাজ চালায় না, সেই ক্ষেত্রে দখলকারী স্বয়ং এই  আইনের উদ্দেশ্যে ম্যানেজার বলিয়া গণ্য হইবেন।

ধারা-৭। মৌসুমী কারখানা :

যেই কারখানায় বত্সরে সাধারণত অনধিক একশত আশি কার্যদিবস উত্পাদন প্রক্রিয়া চালু থাকে এবং নির্দিষ্ট মওসুম ব্যতীত যেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশের অনিশ্চয়তা হেতু উত্পাদন চালু রাখা সম্ভব নহে, সরকারি  গেজেটে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করিয়া সরকার সেইরূপ কারখানাকে এই আইনের উদ্দেশ্যে মওসুমী কারখানা বলিয়া ঘোষণা করিতে পারিবেন।

ধারা-৮। পরিকল্পনা অনুমোদন এবং লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশনের ফী :

(১)  সরকার -

(ক) কোনো কারখানা বা বিশেষ শ্রেণীর কারখানা নির্মাণ বা সম্প্রসারণের জন্য নির্ধারিত পদ্ধতিতে চীফ ইন্সপেক্টরের লিখিত পূর্ব অনুমতি গ্রহণ প্রয়োজন বলিয়া নির্দেশ দিতে পারিবেন;

(খ) কোনো কারখানা বা বিশেষ শ্রেণীর জন্য রেজিস্ট্রেশন বা লাইসেন্স গ্রহণ প্রয়োজন বলিয়া নির্দেশ দিতে এবং নির্ধারিত পদ্ধতিতে উক্ত রেজিস্ট্রেশন বা লাইসেন্সের বা উহার নবায়নের ফী নির্ধারণ করিয়া দিতে পারিবেন।

(২) উপধারা (১)-এর বিধান মোতাবেক পরিকল্পনা ও বিশদ বিবরণসহ অনুমোদনের জন্য কোনো আবেদন চীফ ইন্সপেক্টরের নিকট  প্রেরিত হইলে এবং উহা প্রাপ্তির দুই মাসের মধ্যে আবেদনকারীর নিকট চীফ ইন্সপেক্টরের আদেশ না পৌঁছাইলে ধরিয়া লইতে হইবে যে, তিনি উক্ত আবেদন অনুমোদন করিয়াছেন।

(৩) কারখানা নির্মাণের বা সম্প্রসারণের আবেদন, অথবা রেজিস্ট্রেশনের বা লাইসেন্সের জন্য প্রাপ্ত দরখাস্ত যদি চীফ ইন্সপেক্টর প্রত্যাখ্যান  করেন, তবে উহার ষাট দিনের মধ্যে আবেদনকারী সরকারের নিকট আপীল করিতে পারিবেন।

 

দ্বিতীয় অধ্যায়
চীফ ইন্সপেক্টর,
ইন্সপেক্টরবৃন্দ, সার্টিফিকেট দানকারী সার্জন

ধারা-৯। চীফ ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরগণ :

(১) সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করিয়া যে কোনো ব্যক্তিকে চীফ ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগ করিতে পারেন এবং নিযুক্ত ব্যক্তি এই আইন অনুসারে চীফ ইন্সপেক্টরের ক্ষমতা ব্যবহার ছাড়াও সারা দেশে ইন্সপেক্টরের ক্ষমতা প্রয়োগসহ উপধারা (১)-এর অধীনে নিযুক্ত ইন্সপেক্টরের উপর তদারক ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবেন।

তবে শর্ত এই যে, চীফ ইন্সপেক্টর তাঁহার অধীনস্থ যে কোনো অফিসার বা অফিসারগণকে তত্কর্তৃক নির্দিষ্ট এলাকায় তাঁহার  যাবতীয় ক্ষমতা বা যে কোনো ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার দিতে পারিবেন।

(২) সরকার গেজেটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে যোগ্য বলিয়া বিবেচিত যে কোনো ব্যক্তিকে এই আইনের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগ করিয়া তাঁহাদের প্রত্যেকের ক্ষমতাভুক্ত এলাকা নির্দিষ্ট করিয়া দিতে পারিবেন।

(৩) সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে এই আইনের  যাবতীয় বা যে কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যে কোনো সরকারি  অফিসারকে ইন্সপেক্টর নিযুক্ত করিয়া তাঁহার ক্ষমতাভুক্ত এলাকা নির্দিষ্ট করিয়া দিতে পারিবেন।

(৪)  প্রত্যেক ডেপুটি কমিশনার তাঁহার নিজ জেলার জন্য ইন্সপেক্টর হইবেন।

(৫)  যাহারা কোনো কারখানার সহিত বা কারখানার উত্পাদন প্রক্রিয়া বা ব্যবাসায়, অথবা উহার সংশ্লিষ্ট কোনো প্যাটেন্ট বা যন্ত্রপাতির সহিত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট, অথবা উহাতে যাহাদের  স্বার্থ জড়িত রহিয়াছে, তাঁহারা ইন্সপেক্টর পদে নিযুক্ত হইতে পারিবেন না, অথবা নিযুক্ত হইয়া থাকিলে উক্ত  পদে আর বহাল থাকিবেন না।

(৬) কোনো এলাকায়  একাধিক ইন্সপেক্টর থাকিলে সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে তাঁহাদের প্রত্যেকের ক্ষমতা ভাগ করিয়া দিতে পারেন, এবং কোন ইন্সপেক্টরের নিকট নির্ধারিত নোটিশ পাঠাইতে হইবে, তাহাও উক্ত গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করিতে পারিবেন।

(৭)  চীফ ইন্সপেক্টর এবং প্রত্যেক ইন্সপেক্টর ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ২১ ধারার অর্থ অনুসারে সরকারি কর্মচারি বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উপধারা (৩) অনুসারে নিযুক্ত ইন্সপেক্টরগণ বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশিত কর্তৃপক্ষের অধীনস্থ হইবেন।

(৮)  চীফ ইন্সপেক্টর এবং প্রত্যেক ইন্সপেক্টর ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি ২১ ধারার অর্থ অনুসারে সরকারি কর্মচারি বলিয়া গণ্য হইবেন এবং সরকার যেভাবে নির্দিষ্ট করিয়া দিবেন, তাঁহারা প্রত্যেকে সেইরূপ কর্তৃপক্ষের অধীনস্থ হইবেন।

bbasujon:
ধারা-১০। ইন্সপেক্টারদের ক্ষমতা :

(১)  এই আইনের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একজন ইন্সপেক্টর তাঁহার ক্ষমতাভুক্ত এলাকায়-

     (ক) বাংলাদেশ সরকারের বা কোনো মিউনিসিপ্যালিটির বা স্থানীয় সংস্থার চাকরিতে নিযুক্ত যে কোনো কর্মচারির (তিনি যাহাদের যোগ্য বিবেচনা করিবেন) সহায়তায় ৩ ধারা অনুসারে কারখানা হিসাবে ব্যবহৃত, অথবা কারখানা হিসাবে ব্যবহৃত হইতে পারে, এইরূপ যে কোনো স্থানে প্রবেশ, পরিদর্শন ও পরীক্ষা করিতে পারিবেন;

     (খ) এই আইনের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য রক্ষিত যে কোনো রেজিস্টার, সার্টিফিকেট, নোটিশ বা দলিল  বা দলিল তলব ও পরীক্ষা করিতে এবং প্রয়োজনমতো উহার নকল লইতে পারিবেন;

 (গ) কোনো কারখানা এবং কারখানায় নিযুক্ত কোনো ব্যক্তির স্বাস্থ্যরক্ষা সম্পর্কে এই আইনের এবং প্রচলিত অন্যান্য আইনের বিধান ঠিক মতো মানিয়া চলা যাইতেছে কিনা, তাহা নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনমতো তদন্ত ও পরীক্ষা করিতে পারিবেন;

      (ঘ) কারখানার প্রকৃত দখলকারী সম্পর্কে তথাকার যেই কোনো ব্যক্তি প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করিতে পারিবেন;

           (ঙ) এই আইনের সংশ্লিষ্ট যেই কোনো ব্যাপারে কারখানার প্রত্যেক ব্যক্তিকে, অথবা যে কেহ সেই কারখানায় অন্ততঃ  দুই মাস কাজ করিয়াছে বলিয়া বিশ্বাস করার কারণ থাকিলে, তাহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে পারিবেন।

   তবে শর্ত এই যে, কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে হইবে না বা এমন কোনো সাক্ষ্য দিতে হইবে না, যদ্দারা সে নিজে কোনো অপরাধে জড়িত হইতে পারে; এবং

           (চ) যাহাদিগকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হইবে, তাহাদের প্রত্যেকের লিপিবদ্ধ প্রশ্নোত্তরে প্রত্যয়নস্বরূপ স্বাক্ষর লওয়া হইবে।

      (২)  এই আইন অনুসারে এবং সংশ্লিষ্ট কারখানা সংক্রান্ত  বিষয়ে ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য কারখানা প্রবেশ, পরিদর্শন, পরীক্ষা ও তদন্ত করা এবং দ্রব্যের নমুনা সংগ্রহ প্রভৃতি বিষয়ে প্রত্যেক কারখানায় দখলকারী তাঁহার এজেন্ট বা কর্মচারিগণ ইন্সপেক্টরদের প্রয়োজনীয় সকল রকমের সুযোগ-সুবিধা দান করিবেন;

      (৩)  এই অনুসারে দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য ইন্সপেক্টর নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসারে প্রয়োজনবোধে যে কোনো কারখানার যে কোনো রেকর্ডপত্র, রেজিস্টার বা অন্য দলিল আটক করিতে পারিবেন।

 

ধারা-১১। সার্টিফিকেট দানকারী সার্জন :

(১)  এই আইনের উদ্দেশ্যে সরকার নিজ পছন্দমতো যে কোনো যোগ্য রেজিস্টার্ড চিকিত্সককে সার্টিফিকেটদানকারী সার্জন পদে নিয়োগ করিয়া তাঁহাদের স্ব স্ব আওতাভুক্ত স্থানীয় এলাকার সীমা, অথবা কারখানা বা কারখানার শ্রেণীর নাম নির্দেশ করিয়া দিতে পারিবেন।

(২)  কোনো ব্যক্তি  কোনো কারখানার দখলকারী হইলে, অথবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো কারখানার সহিত তাহার স্বার্থ জড়িত থাকিলে, অথবা উক্ত কারখানার কোনো প্যাটেন্ট  বা যন্ত্রপাতির সহিত তাহার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হইয়া থাকিলে, তাঁহাকে সার্টিফিকেট দানকারী  সার্জন পদে নিয়োগ করা যাইবে না অথবা  পূর্বে নিযুক্ত হইয়া থাকিলে, তিনি আর বহাল থাকিতে পারিবেন না।

(৩)  সার্টিফিকেট দানকারী সার্জনগণ নিম্নোক্ত বিষয়ে নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করিবেন-

(ক) এই আদেশ অনুসারে তরুণ ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সার্টিফিকেট দান;

      (খ) কারখানার নির্ধারিত  বিপদজনক ধরনের পেশা বা কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা;

      (গ) কোনো কারখানায় বা বিশেষ শ্রেণীর কারখানায়  স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দিষ্ট তদারক কার্য, যেইখানে-

        (১) বিশেষ ধরনের উত্পাদন প্রক্রিয়ার দরুন বা অন্য কারণে শ্রমিকগণ অসুস্থ হইয়াছে বা অসুস্থা হইতে পারে বলিয়া বিশ্বাস করার সঙ্গত কারণ রহিয়াছে;

     (২) উত্পাদন পদ্ধতির পরিবর্তন, অথবা উত্পাদনে বিশেষ ধরনের পরিবর্তনের ফলে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের উপর কিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির সম্ভাবনা রহিয়াছে; এবং

      (৩) কোনো কাজে অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিগণ নিযুক্ত থাকিলে বা নিযুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকিলে এবং যদি উক্ত নিযুক্তির ফলে তাহাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

তৃতীয় অধ্যায়
স্বাস্থ্যরক্ষা ব্যবস্থা

ধারা-১২। পরিচ্ছন্নতা :

(১) প্রত্যেক কারখানা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখিতে হইবে এবং অপরিষ্কার নর্দমা বা ময়লা জমার জন্য আবহাওয়া দূষিত হওয়ার কারণ হইতে মুক্ত রাখিতে হইবে, এবং বিশেষত-

     (ক) শ্রমিকদের কাজ করিবার কামরা ও সিঁড়ি  এবং যাতায়াতের পথ ও প্রাঙ্গণ হইতে প্রত্যহ ময়লা ও আবর্জনা ঝাড়ু দিয়া বা অন্য কোনো যথাযথ উপায়ে অপসারণ  করিয়া পরিষ্কার রাখিতে হইবে;

     (খ) শ্রমিকদের কাজ করিবার কামরা প্রতি সপ্তাহে অন্তত একদিন করিয়া পানি দিয়া, অথবা প্রয়োজনবোধে জীবাণুনাশক ঔষধ সহযোগে ধৌত করিয়া অথবা অন্য কোনো কার্যকর পন্থায় পরিষ্কার করিতে হইবে;

      (গ) পণ্য উত্পাদনের প্রক্রিয়াগত কারণে ঘরের মেঝে ভিজিয়া গেলে পানি নিষ্কাশনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে;

      (ঘ) অভ্যন্তরীণ সকল দেওয়াল, পার্র্র্টিশন, সিলিং বা ছাদ এবং দেওয়ালের উপরিভাগ এবং চলাচলের প্যাসেজ ও সিঁড়ি

        (১) রং বা বার্র্র্নিশ করা থাকিলে  প্রতি পাঁচ বত্সর অন্তর একবার পুনঃরং বা পুনঃবার্ণিশ করিতে হইবে;

        (২) রং বা বার্ণিশ করা থাকিলে এবং উহার উপরিভাগে চুন-বালি এখানে-সেখানে খসিয়া পড়ার মতো হইলে  প্রতি চৌদ্দ মাসে অন্তত একবার পরিষ্কার ও মেরামত করিতে হইবে;

        (৩) অন্যান্য ক্ষেত্রে  চৌদ্দ মাসে অন্তত একবার চুনকাম বা বার্র্র্নিশ করিতে হইবে; এবং

          (ঙ) উপরে বর্ণিত (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে কার্য সম্পাদনের তারিখ নির্দিষ্ট রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করিয়া রাখিতে হইবে।

          (চ)  কোনো কারখানায় সম্পাদিত কাজের প্রকৃতির জন্য যদি সেইখানে (১) উপধারা অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভবপর না হয়, তাহা হইলে সেই ক্ষেত্রে সরকার নির্দেশ জারি করিয়া সেই কারখানাকে উক্ত উপধারার আওতা হইতে রেহাই দান এবং কারখানা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিকল্প পন্থার নির্দেশ দিতে পারিবেন।

 

ধারা-১৩। ব্যবহারবর্জিত দ্রব্য ও তরল পদার্থ অপসারণ :

(১)  কারখানায় পণ্য উত্পাদনের সময় বর্র্জিত দ্রব্য ও পদার্থ অপসারণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে।

(২)  সরকার উপধারা (১) অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করিয়া দিতে, অথবা উক্ত উপধারা প্রতিপালন করা সম্পর্কে কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণের পন্থা নির্দেশ দিতে পারিবেন।

ধারা-১৪। বায়ু চলাচল ও তাপমাত্রা :

(১)  প্রত্যেক কারখানায় প্রতিটি কাজের ঘরে নিম্নোক্ত বিষয়ে কার্যকর ও সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকিতে হইবে-

(ক) পরিষ্কার বাতাস প্রবেশের উপযোগী পর্যাপ্ত ব্যবস্থা; এবং

(খ) শ্রমিকদের শরীর সুস্থ থাকার উপযোগী এবং স্বাস্থ্যহানির কারণ দূরীকরণের উপযুক্ত তাপমাত্রার ব্যবস্থা, এবং বিশেষত-

(১)  কাজের ঘরের ছাদ ও দেওয়াল এমনভাবে এবং এমন মাল-মসলা দ্বারা নির্মিত হইতে হইবে, যেন সকল সময় তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে;

(২)  যেইখানে কারখানার বিশেষ কাজের ফলশ্রুতিতে তাপ মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পাইতে পারে, সেইখানে এমন কার্যকর ও সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে, যাহাতে কাজের ঘর হইতে গরম বাতাস বাহির হইয়া শ্রমিকদের স্বাস্থ্য রক্ষার উপযোগী স্বাভাবিক আবহাওয়া বিরাজমান থাকে।

(৩)  যে কোনো কারখানার জন্য বা কোনো বিশেষ শ্রেণীর কারখানা বা উহার কোনো অংশের জন্য সরকার পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ব্যবস্থার ও উপযুক্ত তাপমাত্রার মান নির্ধারণ করিয়া এই মর্মে নির্দেশ দিতে পারেন যে, উক্ত কারখানার কোনো নির্দিষ্ট স্থানে একটি তাপমান যন্ত্র সংস্থাপন করিতে হইবে।

(৪)  সরকার যদি মনে করেন যে, কোনো কারখানায় বা বিশেষ শ্রেণীভুক্ত কারখানায় চুনকাম করিয়া, স্প্রে করিয়া বা বিচ্ছিন্ন করিয়া বর্হিদেওয়ালে বা জানালা বা ছাদে পর্দা দিয়া বা ছাদ উঁচু করিয়া বা ডবল ছাদ নির্মাণ করিয়া বর্ধিত তাপমাত্রা হ্রাস করা সম্ভব, তাহা হইলে সংশ্লিষ্ট কারখানায় উপরোক্ত ব্যবস্থা বা অন্য কোনো কার্যকর ও সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিতে পারিবেন।

bbasujon:
ধারা-১৫। ধূলা-বালি ও ধোঁয়া :

(১)  কোনো কারখানায় বিশেষ ধরনের পণ্য উত্পাদন পদ্ধতির কারণে যদি ধূলা-ময়লা জমা হইয়া বা ধুম্র উদ্গীরণের ফলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, উহা শ্রমিকদের পক্ষে ক্ষতিকর হইতে পারে, তবে উক্ত ধূলা-ময়লা জমা হওয়ার বা শুধু উদগীরণের সুষ্ঠু প্রতিষেধক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে।

(২)  কোনো কারখানায় উণ্মুক্ত স্থানে ধোঁয়া নিষ্কাষণের ব্যবস্থা না থাকিলে, ঘরের মধ্যে ইঞ্জিন চালনা হইবে না এবং ধোঁয়া জমিয়া কাজের ঘরে কার্যরত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হইতে না পারে, তজ্জন্য সুষ্ঠু ও কার্যকর প্রতিষেধক ব্যবস্থা গ্রহণ না করিয়া ঘরের মধ্যে উক্ত ইঞ্জিন চালানো যাইবে না।

ধারা-১৬। কৃত্রিম আদ্রতা :

(১)     যেই সমস্ত কারখানায় বাতাসে কৃত্রিম আদ্রতা সৃষ্টি হয়,  সেইগুলির বেলায় সরকার নিম্নরূপ বিধিমালা প্রবর্তন করিতে পারিবেন-

(ক)     আদ্রতার মান নির্ধারণ করিয়া;

(খ)   বাতাসে কৃত্রিম আর্দ্রতা সৃষ্টির মাত্রা হ্রাসের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া নির্ধারণ করিয়া;

(গ)   সৃষ্ট আদ্রতা পরিমাপ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দান করিয়া; এবং

(ঘ)   কাজের ঘরগুলিতে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ব্যবস্থা এবং বাতাস ঠাণ্ডা রাখিবার উপযুক্ত ব্যবস্থা নির্ধারণ করিয়া।

(২)   কোনো কারখানার বাতাসে কৃত্রিম আদ্রতা বৃদ্ধি পাইলে, সেইখানে ব্যবহারের জন্য সরকারি  সরবরাহ ব্যবস্থা হইতে, অথবা অন্য কোনোভাবে বিশুদ্ধ খাবার পানি গ্রহণ করিতে হইবে, অথবা ব্যবহার্য পানি উত্তমরূপে বিশুদ্ধ করিয়া লইতে হইবে।

(৩)      ইন্সপেক্টর যদি দেখিতে পান যে, কোনো কারখানায় কৃত্রিম  আদ্রতা সৃষ্টির জন্য ব্যবহৃত পানি উপধারা (২) -এ বর্ণিত বিধান মোতাবেক উত্তমরূপে বিশুদ্ধ করা হইতেছে না, তাহা  হইলে তিনি সংশ্লিষ্ট কারখানার ম্যানেজারকে লিখিত নোটিশ জারি করিয়া নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে  উক্ত উপধারা মোতাবেক যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারিবেন।

ধারা-১৭। অতিরিক্ত ভীড় :

(১)  কোনো কারখানার কোনো কাজের ঘরে যেন এত ভীড় না হয়, যাহা কারখানায় নিযুক্ত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হইতে পারে।

(২)  উপধারা (১)-এ বর্ণিত বিধান সাধারণভাবে লংঘন না করিয়া প্রতিটি কাজের ঘরে কার্যে নিযুক্ত প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থা থাকিতে হইবে-

(ক)  এই আইন বলবত হওয়ার তারিখে বিদ্যমান কারখানায় অন্ততপক্ষে তিন শত পঞ্চাশ বর্গফুট স্থান থাকিতে হইবে; এবং

(খ)  এই আইন বলবত হওয়ার পরে নির্র্র্মিত কারখানার বেলায় অন্ততপক্ষে পাঁচ শত বর্গফুট স্থান থাকিতে হইবে;

(৩)  চীফ ইন্সপেক্টর লিখিত নির্দেশ জারি করিলে সংশ্লিষ্ট কারখানার প্রতিটি কাজের ঘরে সর্বাধিক কতজন করিয়া  শ্রমিককে কাজে নিয়োগ করা হইবে, তত্সংক্রান্ত নোটিশ প্রতিটি কাজের ঘরে লটকাইয়া রাখিতে হইবে।

(৪) চীফ ইন্সপেক্টর যদি মনে করেন যে, কোনো কারখানার কাজের ঘরগুলি এমনভাবে নির্মিত হইয়াছে যে, সেইখানে এই ধারার বিধান কার্যকর না করিলেও শ্রমিকদের স্বাস্থ্য অক্ষুন্ন থাকিবে, তবে সেই ক্ষেত্রে প্রয়োজনবোধে তিনি লিখিত নির্দেশ জারি করিয়া নিজ বিবেচনায় উপযুক্ত শর্ত সাপেক্ষে উক্ত কারখানাকে এই ধারার বাধ্যবাধকতা হইতে রেহাই দিতে পারিবেন।

ধারা-১৮। আলোর ব্যবস্থা :

(১) প্রত্যেক কারখানার প্রতি অংশে, যেখানে শ্রমিকগণ কাজ করে বা চলাচল করে, প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম বা উভয় প্রকারের পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকিতে হইবে।

(২) প্রত্যেক কারখানার প্রতিটি কাজের ঘরে ১৪ ধারার উপধারা (৩) অনুসারে আলো প্রবেশের জন্য ব্যবহৃত জানালার কাঁচ বা ছাদ সংলগ্ন কাঁচের গবাক্ষসমূহ ভিতর ও বাহির উভয় দিকেই পরিষ্কার করিয়া রাখিতে হইবে।

(৩) নিম্নোক্ত অবস্থাসমূহ প্রতিরোধের জন্য প্রত্যেক কারখানায় যতদূর সম্ভব কার্যকর ব্যবস্থা থাকিতে হইবে-

(ক) প্রত্যক্ষ আলোকচ্ছটা বা মসৃণ মেঝেতে প্রতিফলিত আলোকচ্ছটা; এবং

(খ) ঘণীভূত ছায়া, যাহা  চোখের জন্য ক্ষতিকর, অথবা দুর্ঘটনার কারণ হইতে পারে।

(৪) সকল কারখানায় বা কোনো বিশেষ শ্রেণীর কারখানায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা সংক্রান্ত মান সরকার নির্দিষ্ট করিয়া দিতে পারিবেন।

ধারা-১৯। খাবার পানি :

(১)  প্রত্যেক কারখানায় শ্রমিকদের ব্যবহারের জন্য যথোপযুক্ত স্থানে সর্বক্ষণ বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা থাকিতে হইবে।

(২)  খাবার পানি রাখিবার জায়গায় অধিকাংশ শ্রমিকের বোধগম্য ভাষায় ‘খাবার পানি’ কথাটি লিখিয়া রাখিতে হইবে এবং চীফ ইন্সপেক্টরের লিখিত অনুমতি ছাড়া উক্ত স্থানে ২০ ফুটের মধ্যে কোনো ধৌতাগার, প্রস্রাবখানা বা পায়খানা থাকিতে পারিবে না।

(৩) সাধারণত আড়াই শতাধিক শ্রমিক কর্মে নিযুক্ত রহিয়াছে, এইরূপ প্রত্যেক কারখানায় গরমের মওশুমে খাবার পানি ঠাণ্ডা রাখিবার এবং শ্রমিকদের মধ্যে উহা সরবরাহের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা থাকিতে হইবে।

(৪) সকল কারখানায় বা বিশেষ শ্রেণীভু্ক্ত কারখানাসমূহে এই ধারার বিধানসমূহ কার্যকরীকরণ নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে সরকার বিধিমালা প্রণয়ন করিতে পারিবেন।

bbasujon:
ধারা-২০। পায়খানা ও প্রসাবখানা :

(১)   প্রত্যেক কারখানায়-

(ক)  কার্যরত শ্রমিকগণ সহজে ব্যবহার করিতে পারে, এমন সুবিধাজনক স্থানে নির্ধারিত ধরনের পায়খানা ও প্রস্রাবখানার                পর্যাপ্ত ব্যবস্থা সর্বক্ষণের জন্য থাকিতে হইবে;

(খ)  পুরুষ ও মহিলা শ্রমিকদের জন্য পৃথক প্রস্রাবখানাসমূহে উপযুক্ত আলোর ব্যবস্থা  থাকিতে  হইবে;

(গ)  উপরোক্ত পায়খানা ও প্রস্রাবখানাসমূহে উপযুক্ত আলোর ব্যবস্থা এবং বায়ু চলাচল ব্যবস্থা থাকিতে হইবে এবং চীফ ইন্সপেক্টর লিখিতভাবে রেহাইমূলক আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত কোনো পায়খানা ও প্রস্রাবখানা শ্রমিকদের কাজের ঘরের সংলগ্ন হইবে না;

(ঘ) উপরোক্ত পায়খানা ও প্রস্রাবখানাসমূহ যথোপযুক্তভাবে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখিতে হইবে এবং সেখানে জীবাণুনাশক ঔষধ ব্যবহার করিতে হইবে;

(ঙ) উপরোক্ত পায়খানা ও প্রস্রাবখানাসমূহের অভ্যন্তরীণ দেওয়াল ও মেঝে উপরে  ৩ ফুট পর্যন্ত  পাকা মসৃণ গাঁথুনিযুক্ত হইতে হইবে।

(চ)   প্রত্যেক কারখানার পুরুষ ও মহিলা শ্রকিদের সংখ্যার অনুপাতে পায়খানা ও প্রস্রাবখানার সংখ্যা এবং কারখানায়

স্বাস্থ্যসম্মত  পরিচ্ছন্নতার বিধান সম্পর্কে সরকার নিয়মাবলী প্রণয়ন করিতে পারিবেন।

ধারা-২১। পিকদানি :

(১)  প্রত্যেক কারখানায় সুবিধাজনক স্থানে যথেষ্ট সংখ্যক পিকদানির ব্যবস্থা থাকিতে হইবে এবং  উহা স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখিতে হইবে।

(২)  সরকার যে কোনো কারখানায় পিকদানির ধরন ও সংখ্যা নির্ধারণ এবং উহা স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অবস্থায় সংরক্ষণ সম্পর্কে নিয়মাবলী প্রণয়ন করিতে পারিবেন।

(৩)  কোনো ব্যক্তি কোনো কারখানায় রক্ষিত পিকদানি ছাড়া অন্য কোথাও  থুথু ফেলিবে না। এই নির্দেশ এবং ইহা লংঘনের শাস্তি সম্বলিত নোটিশ কারখানার অভ্যন্তরে উপযুক্ত স্থানে লটকাইয়া রাখিত হইবে।

(৪)  কোনো ব্যক্তি উপধারা (৩)-এর বিধান লংঘন করিয়া ফেলিলে সে অনধিক দুই টাকা পর্যন্ত জরিমানা দণ্ডে দণ্ডীত হইবে।

Navigation

[0] Message Index

[#] Next page

Go to full version