Author Topic: শরীরে জিংকের প্রয়োজনীয়তা অনেক  (Read 6304 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
জিংক বা দস্তা আমাদের শরীরের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। সুস্থ শরীরে অতি সূক্ষ্ম পরিমাণে জিংক বিদ্যমান থাকে। এর উপস্থিতি ও গ্রহণের ক্ষমতা প্রাকৃতিকভাবেই নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরের এক লাখ বা সমপরিমাণ আমিষের মধ্যে তিন হাজার আমিষই জিংক ধারণ করে এবং তিন শর বেশি এনজাইমের সঠিক পরিচালনার জন্য জিংকের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। রক্তের লোহিত কণিকা, শ্বেতকণিকা, চোখের রেটিনা, হাড়, ত্বক, কিডনি, যকৃৎ, অগ্ন্যাশয়, লালা গ্রন্থি ও প্রোস্টেট গ্রন্থিতে জিংক সঞ্চিত থাকে।
খাদ্যে সঠিক মাত্রায় জিংকের অনুপস্থিতি, কোনো কারণে শরীর থেকে মলমূত্র, চুল, ত্বক, ঘাম, বীর্য বা ঋতুস্রাবের সঙ্গে নিঃসরিত বেশি হলে, যকৃৎ ও অগ্ন্যাশয়ের অস্বাভাবিকতায়, মাদকাসক্ততা ও বহুমূত্র রোগে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস টাইপ ২-এ আক্রান্তদের মধ্যে শরীরে জিংক শোষণের মাত্রা হ্রাস পেয়ে এর অভাবজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
জিংক বৃদ্ধিজনিত প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকটি এনজাইমের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হওয়ায় গর্ভকালীন জিংকের ঘাটতি জন্মগত ত্রুটি, কম ওজন বা বামনাকৃতি শিশু জন্ম দেওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়। শৈশবে ও বয়ঃসন্ধিকালে স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি এবং বিকাশ ঘটানোর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জিংকের অভাবে ডায়রিয়া বা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও কনজাংকটিভার প্রদাহ, পায়ে বা জিহ্বায় ক্ষত, একজিমা, ব্রণ বা সোরিয়াসিস-জাতীয় ত্বকের প্রদাহ, ছত্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণজনিত অসুস্থতা এবং শরীরের ক্ষত শুকাতে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। রোগ-প্রতিরোধক তন্ত্রকে উজ্জীবিত করে তুলে জিংক এ ধরনের সমস্যা প্রতিরোধ করতে, জটিল জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থেকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে শরীরের কোষকলাকে ফ্রি-রেডিকেলের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এবং ক্ষতের সুস্থতা ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে।
জিংক অ্যান্টিসেপটিক ও ত্বক-সংরক্ষক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণ ঠান্ডার চিকিৎসায় অল্প মাত্রায় জিংক সেবনে দ্রুত কাজ হয়। হজম প্রক্রিয়া, ডায়াবেটিস, ক্ষুধা ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে, রক্তে ভিটামিন-ই, ভিটামিন-এ এবং কোলাজেনের সঠিক মাত্রা নিয়ন্ত্রণে, স্বাদেন্দ্রিয়, দৃষ্টি, শ্রবণ, ঘ্রাণ ও ্নরণশক্তির সঠিক পরিচালনা এবং প্রজননতন্ত্রের বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে; প্রোস্টেটের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কমায়।
পুরুষের বীর্যবাহক তরলে জিংক উচ্চমাত্রায় থাকে। তাই জিংকের ঘাটতি পুরুষের প্রজননক্ষমতা কমিয়ে দেয়। অটিজমে আক্রান্ত ৯০ শতাংশ শিশুর মধ্যে জিংকের ঘাটতি দেখা যায়। আচরণগত অস্বাভাবিকতা, অমনোযোগিতা, বিষণ্নতা, সিজোফ্রেনিয়া, ক্ষুধামান্দ্য ও বুলিমিয়াজাতীয় খাদ্যাভ্যাসের অস্বাভাবিকতার সঙ্গে জিংকের ঘাটতির সম্পর্ক আছে।
অনেক গবেষকের মতে, জিংক নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে। আর এর ঘাটতি মস্তিষ্কের নিউরনগুলোর কর্মকাণ্ডে বাধার সৃষ্টি করে বলে এ-জাতীয় সমস্যাগুলো দেখা দেয়। এইডস রোগীদের মধ্যেও সাধারণভাবে জিংকের অভাবজনিত সমস্যা থাকে। শারীরিকভাবে জিংকের অভাবজনিত লক্ষণগুলোর প্রকাশ তেমন সুস্পষ্ট নয় বলে রোগনির্ণয় অনেক ক্ষেত্রে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। সাধারণভাবে রক্তের সেরামে জিংকের মাত্রা পরীক্ষা করে ঘাটতি নির্ণয় করা হয়। কিন্তু প্লাজমা বা সেরাম পদ্ধতিতে রোগনির্ণয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা অনিশ্চয়তা থেকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই চুল, মূত্র ও নখের নমুনা সংগ্রহ করে সম্মিলিত ফলাফলের ভিত্তিতে রোগ নির্ণয় করা হয়।
স্বাভাবিক ক্ষেত্রে শিশুদের সেরামে জিংকের মাত্রা ৬৬ থেকে ১৯৪ মিলিগ্রাম পর্যন্ত।
ব্যক্তিবিশেষে শরীরে জিংকের চাহিদার ভিন্নতা থাকলেও সাধারণভাবে প্রতিদিন ১৫ মিলিগ্রাম জিংক গ্রহণ এর অভাবজনিত সমস্যা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি কমায়। মৃদু থেকে মধ্যম ঘাটতির জন্য কয়েক মাস এবং তীব্র ঘাটতির জন্য এক থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের শরীরে জল ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে স্যালাইন প্রয়োগের পাশাপাশি সম্পূরক হিসেবে জিংক প্রদান করা হলে রোগটির স্থায়িত্ব ও তীব্রতা কমে আসে। পুষ্টিহীনতার শিকার তৃতীয় বিশ্বের শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে পুষ্টিহীনতা কাটিয়ে উঠতে সম্পূরক হিসেবে নির্দিষ্ট মাত্রায় জিংক প্রদান করা যেতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন ২০ মিলিগ্রাম করে ১০ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত (ছয় মাসের চেয়ে কমবয়সী শিশুদের জন্য প্রতিদিন ১০ মিলিগ্রাম) সম্পূরক জিংক গ্রহণের সুপারিশ করে। গরু ও ভেড়ার মাংসে উচ্চমাত্রায় জিংক রয়েছে। দুগ্ধজাত খাদ্য, শিমজাতীয় উদ্ভিদ, মসুরের ডাল, চিনাবাদাম, মাশরুম, সয়াবিন, ঝিনুক এবং এ থেকে তৈরি মাখনেও জিংক রয়েছে। এখন অবশ্য জিংকের সম্পূরক হিসেবে বিভিন্ন ধরনের ওষুধও রয়েছে। আমাদের দেশে স্বাস্থ্য রক্ষায় জিংকের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে এখনো তেমন সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। তাই এ ব্যাপারে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

জাকিয়া বেগম
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১৩, ২০০৯
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection