Author Topic: গর্ভকালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যা  (Read 2846 times)

bbasujon

  • Administrator
  • VIP Member
  • *****
  • Posts: 1826
  • I want to show my performance at any where
    • View Profile
    • Higher Education
র্ভধারণ একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় ব্যাপার। স্বাভাবিক হলেও এ সময় শরীরে কিছু পরিবর্তন ঘটে। সে জন্য গর্ভকালীন সময়ে কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দেয়। এগুলো তেমন উদ্বেগের বিষয় নয়, সহজেই এসবের সমাধান সম্ভব। তবে অনেক সময় বা অনেকের ক্ষেত্রে এসব সাধারণ সমস্যাও বেশ কষ্ট দেয়। গর্ভকালীন কয়েকটি সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:

বমি বমি ভাব বা বমি
দিনের শুরুতেই গর্ভবতীর বমি বমি ভাব হয় বা বমি হয়। প্রথম দিকে গর্ভ সঞ্চারের লক্ষণও এটি। দিনের অন্য যেকোনো সময়ও বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। সাধারণত গর্ভকালীন মায়েদের প্রথম তিন মাস পর্যন্ত এ লক্ষণ স্থায়ী হয়। গর্ভকালীন মায়েরা তেমন কিছু খেতে পারেন না। যা খান বমি হয়ে যায়। কোনো কিছুর গন্ধও সহ্য করতে পারেন না। গন্ধেও বমির উদ্রেক হয়। এ সমস্যা হলে অল্প করে ঘন ঘন খাবার খেতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিস্কুট, টোস্টজাতীয় শুকনো কিছু খাবার খেলেও উপকার পাওয়া যায়। তৈলাক্ত খাবার কম খেলেও উপকার পাওয়া যায়। বমি খুব বেশি হলে বা সমস্যাটা তিন মাসের বেশি স্থায়ী হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

বুক জ্বলা বা এসিডিটি
গর্ভকালে এ সমস্যাটা অনেকেরই হয়। গর্ভকালে প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায় বলে এসিডিটি হয়। এসিডিটি বা বুক জ্বালা হলেও অল্প করে ঘন ঘন খাবার খেতে হবে। তৈলাক্ত খাবার, ভাজাপোড়া খাবার ও বেশি মসলাযুক্ত খাবার কম খেতে হবে। একসঙ্গে বেশি খাবার না খেলেও উপকার পাওয়া যায়। খাওয়ার সময় পানি কম পান করতে হবে। দুই খাবারের মধ্যবর্তী সময়ে বেশি বেশি পানি পান কতে হবে। খাওয়ার পর পরই উপুড় হওয়া বা বিছানায় শোয়া উচিত নয়। তাতে বুক জ্বালা বাড়বে। চিকিৎসকের পরামর্শমতো অ্যান্টাসিডজাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য
গর্ভকালে প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায় বলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য একটি কষ্টকর সমস্যা। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে অর্শ বা পাইলস এবং মলদ্বার ছিঁড়ে গিয়ে তাতে ক্ষত হতে পারে। ক্ষত শুকিয়ে মলদ্বার সরু হয়ে যেতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয়, সে জন্য দৈনিক পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। দৈনিক অন্তত আট গ্লাস চাই। আঁশ আছে এমন খাবার খেতে হবে বেশি বেশি। শাকসবজি, ফলমূল, বিচিজাতীয় খাবার, ডাল, পূর্ণ দানাশস্য খাদ্য, গমের আটা, ইত্যাদিতে আঁশ বেশি আছে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম যেমন হাঁটাহাঁটি করাও কোষ্ঠকাঠিন্যে উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে সাময়িক পরিত্রাণের জন্য গ্লিসারিন সাপোজিটরি ব্যবহার করা যায়।

অর্শ ও পাইলস
দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগলে অর্শ হতে পারে। অর্শ হলে পায়খানা করার সময় মলদ্বারের রক্তনালি ছিঁড়ে রক্ত বের হয়। মলদ্বারে ব্যথা হয়। পাইলসের সমস্যা যেন না হয়, সে জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস করতে হবে, বেশি বেশি আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে এবং পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। আর অর্শ হয়ে থাকলে মলদ্বারের ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে একখণ্ড বরফ টিস্যুতে বা বাপড়ে পেঁচিয়ে মলদারে ধরে রাখলে উপকার পাওয়া যাবে। একটা পাত্রে হালকা গরম পানি দিয়ে দিনে কয়েকবার তাতে কিছুক্ষণ বসে থাকলেও উপকার পাওয়া যাবে। চিকিৎসকের পরামর্শে অর্শের ক্রিম বা সাপোজিটরিও ব্যবহার করা যায়।

ঘন ঘন প্রস্রাব
গর্ভাবস্থায় জরায়ু বড় হয় এবং প্রস্রাবের থলিতে বাড়তি চাপ প্রয়োগ করে। এ কারণে প্রস্রাবের থলি পূর্ণ হওয়ার আগেই প্রস্রাবের চাপ অনুভূত হয়। সে কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। এ জন্য দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। ঘন ঘন প্রস্রাব হয় বলে পানি কম পান করা উচিত নয়; বরং পর্যাপ্ত পানিই পান করতে হবে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শমতো প্রস্রাব পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে ইনফেকশন আছে কি না বা ডায়াবেটিস আছে কি না তা দেখার জন্য। থাকলে সেইমতো চিকিৎসা নিতে হবে।

প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা
সামান্য কাশি হলে বা সামান্য ভারী কিছু ওঠানোর সময় প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা—বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এ সমস্যা দেখা দেয়। প্রস্রাবের এমন সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো প্রস্রাবের রাস্তা ও মলদ্বারের আশপাশের মাংসপেশির ব্যায়াম করলে উপকার পাওয়া যাবে।

নিম্নাঙ্গ বা পায়ের পেশিতে খিঁচুনি ও ব্যথা
সাধারণত গর্ভাবস্থার দ্বিতীয়ার্ধে এবং বিশেষ করে রাতের বেলায় হাঁটুর নিচে পায়ের পেছনের পেশিতে (কাফ মাসল) খিঁচুনি ও ব্যথা হয়। শোবার আগে কাফ মাসলের ব্যায়াম করলে পেশির খিঁচুনি হওয়ার আশঙ্কা কমে। আর খিঁচুনি হলে পায়ের আঙুলগুলো হাঁটুর দিকে বাঁকা করে টান টান করে কাফ মাসলের স্ট্রেচিং ব্যায়াম করতে হবে। তাতে খিঁচুনি কমবে। বিছানা থেকে উঠে একটু হাঁটলেও খিঁচুনি ও ব্যথা কমতে পারে।

নিম্নাঙ্গের বা পায়ের শিরা ফুলে আঁকাবাঁকা হয়ে যাওয়া
গর্ভাবস্থায় বড় হয়ে যাওয়া জরায়ু পায়ের দিক থেকে রক্ত ফিরে যাওয়ার পথে কিছুটা বাধার সৃষ্টি করে। তাই অনেকের ক্ষেত্রে নিম্নাঙ্গের শিরাগুলো কিছুটা ফুলে যায় এবং আঁকাবাঁকা হয়। এরূপ যেন না হয়, সে জন্য বা এমন হয়ে গেলে বেশিক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে না থেকে মাঝেমধ্যে একটু পায়চারি করার অভ্যাস করতে হবে। হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করতে হবে। ঢিলেঢালা কাপড় পরতে হবে। বিশ্রাম নেওয়ার সময় পা দুটো সামান্য উঁচুতে রাখতে হবে। তবে এক পায়ের ওপর আরেক পা উঠিয়ে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা উচিত হবে না।

পিঠে বা কোমরে ব্যথা
গর্ভাবস্থায় শরীরের ওজন বেড়ে যায়। তা ছাড়া অস্থিসন্ধির লিগামেন্টগুলোও কিছুটা নরম ও নমনীয় হয়। এসব করণে পিঠে ও কোমরে ব্যথা হতে পারে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। দাঁড়ানো বা বসার সময় মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হবে। একটানা বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে না থেকে মাঝেমধ্যে শুয়ে বিশ্রাম নিতে হবে। উঁচু হিলের জুতা ব্যবহার না করে নিচু হিলের জুতা ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে হবে।

মো. শহীদুল্লাহ
বিভাগীয় প্রধান, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ
কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০২, ২০১১
Acquire the knowledge and share the knowledge so that knowing,learning then sharing - all are the collection